সর্বশেষ আপডেট

স্বাস্থ্য

প্রযুক্তি

ভিডিও

From our Blog

Showing posts with label ধর্মচিন্তা. Show all posts
Showing posts with label ধর্মচিন্তা. Show all posts

Monday 23 May 2016

ঋণ পরিশোধ করলে তবেই জান্নাত



ঋণ দেয়া একটি নেক কাজ। কুরআন ও হাদিস মানুষকে ঋণ দিতে বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিয়েছে। শুধু উৎসাহ দিয়েই ক্ষান্ত হননি। বরং ঋণ দেয়াকে অনেক সওয়াবের কাজ হিসাবে ঘোষণা দিয়েছে। একটি হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, আমি যখন মেরাজে গিয়েছিলাম, তখন বেহেশতের দরজার ওপর লেখা দেখেছি, খয়রাতের সওয়াব ১০ গুণ, আর কর্জে হাসানার সওয়াব ১৮ গুণ। দানের অর্থ ফেরত দিতে হয় না কিন্তু ঋণ বা কর্জে হাসানার অর্থ ফেরত দিতে হয়। কর্জে হাসানা ফেরত দেয়ার পরেও প্রায় দ্বিগুণ সওয়াবের কথা বলা হয়েছে। মূলত প্রতিটি মানুষ যেন স্বাবলম্বী হতে পারে এই করণে ইসলাম ঋণের ব্যবস্থাপত্র দিয়েছে।

আমাদের দেশে অনেকেই আছেন ব্যাংক থেকে বিরাট অঙ্কের ঋণ নিয়ে বেমালুম হজম করে ফেলেন। গত মঙ্গলবারে প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে তথ্য প্রকাশ করেছে, গত মার্চ পর্যন্ত ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ৫৯ হাজার ৪১১ কোটি টাকা। এ সময় পর্যন্ত ব্যাংকগুলো অবলোপন করেছে ৪১ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৪৮ কোটি টাকা। সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোও খেলাপি ও অবলোপনে রয়েছে একই কাতারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক খাতে গত মার্চ পর্যন্ত বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ ৯৮ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। অবলোপন হওয়া ঋণকে হিসাবে ধরলে এর হার আরও বেশি হবে। যারা এই ধরণের ঋণখেলাপি করে তাদের বিষয়ে রাসূল (সা.) এর সতর্কবাণী রয়েছে।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে জাহাশ (রা.) এর একটি দীর্ঘ হাদিস। রাসূল (সা.) ঋণ সম্পর্কে বলেন, সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, যদি কোনো ব্যক্তি জিহাদে শহীদ হয়ে যায়, জীবিত হয়ে (পুনরায়) শহীদ হয়ে যায় আবার জীবিত হয়ে (তৃতীয়বার) শহীদ হয়ে যায়, তার জিম্মায় কারও ঋণ প্রাপ্য থাকলে সে জান্নাতে যাবে না, যে পর্যন্ত তার ঋণ শোধ করা না হয়। (নাসায়ি, তিবরানি, হাকেম)

তবে রাসূলে পাক (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ঋণ গ্রহণ করে এবং তা পরিশোধ করার ইচ্ছা রাখে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তার পক্ষ থেকে তার ঋণ শোধ করে দেবেন। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ঋণ শোধ করার ইচ্ছা রাখে না এবং এ অবস্থায় মারা যায়, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে বলবেন, তুমি বোধ হয় মনে করেছিলে, আমি আমার বান্দার হক তোমার কাছ থেকে আদায় করব না। এরপর ঋণ গ্রহীতার কিছু সৎকর্ম ঋণ দাতাকে দেয়া হবে। সে যদি কোনো সৎকর্ম না করে থাকে, তবে ঋণদাতার কিছু গুনাহ তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে। (তিবরানি, হাকেম)।

আমাদের অনেক চাহিদা রয়েছে। এই চাহিদা মেটানোর জন্য নিজের কাছে অর্থ না থাকলে ঋণ করতে হয়। তাই যারা ঋণ গ্রহণ করেন তাদের উচিৎ সময় মত তা ফিরিয়ে দেয়া। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমীন।

প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মদ স. এর রওজা মোবারকের ভিতরের দুর্লভ দৃশ্য (ভিডিও)

প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মদ স. এর রওজা মোবারকের ভিতরের দুর্লভ দৃশ্য (ভিডিও)

প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মদ (সঃ) এর রওজা মোবারক এর ভিতরের দৃশ্য এক সময় দেখার সুযোগ থাকলেও বর্তমানে তা প্রায় অসম্ভব।

সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানব রাসুল (সঃ) এর এই পবিত্র রওজা মোবারক দেখার সৌভাগ্য কে না পেতে চায়। আসুন সংরক্ষিত কিছু দুর্লভ দৃশ্য এই ভিডিওতে।






Monday 16 May 2016

স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত- এটি কি কোনো হাদিস?

স্ত্রীর প্রতি স্বামীর হক বা স্বামীর আনুগত্য বিষয়ে অনেকে বলে থাকেন, হাদিসে আছে- স্বামীর পায়ের নীচে স্ত্রীর বেহেশত।

স্ত্রীর প্রতি স্বামীর হক বা স্বামীর আনুগত্য বিষয়ে অনেকে বলে থাকেন, হাদিসে আছে- স্বামীর পায়ের নীচে স্ত্রীর বেহেশত। অনেকে আগ বাড়িয়ে আরবি হাদিসটিও বলেন যে,    الجنة تحت أقدام الأزواج


কিন্তু হাদিসের গ্রন্থাবলিতে এ শব্দ-বাক্যে কোনো হাদীস পাওয়া যায় না। সুতরাং এটিকে হাদীস বলা যাবে না। যদিও কিছু বর্ণনায় এর মর্মার্থ পাওয়া যায়।

হাদীসের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে- একবার এক নারী সাহাবী রাসূলের কাছে এলেন নিজের কোনো প্রয়োজনে। যাওয়ার সময় রাসূল [সা] তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি স্বামী আছে? তিনি বললেন, জী, আছে। নবীজী বললেন, তার সাথে তোমার আচরণ কেমন? সে বলল, আমি যথাসাধ্য তার সাথে ভালো আচরণ করার চেষ্টা করি। তখন নবীজী বললেন, হাঁ, তার সাথে তোমার আচরণের বিষয়ে সজাগ থাকো, কারণ সে তোমার জান্নাত বা তোমার জাহান্নাম। (মুআত্তা মালেক, হাদীস ৯৫২)

এছাড়া রাসুল [সা] নারীদেরকে স্বামীর আনুগত্য করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং এর ফযীলতও বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নারী যখন পাঁচ ওয়াক্ত নামায ঠিকমত আদায় করবে, রমযানের রোযা রাখবে, আপন লজ্জাস্থানের হেফাযত করবে, স্বামীর আনুগত্য করবে- তখন সে জান্নাতের যেই দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।(সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৪১৬৩)

সুতরাং গুনাহের কাজ নয় এমন বিষয়ে স্বামীর আনুগত্য জরুরি। কিন্তু ‘স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত’ এটি হাদীস নয়।

আসহাবে কাহফের কুকুর, সুলাইমান আ.-এর পিঁপড়া, সালেহ আ.-এর উটনী, ইসমাঈল আ.-এর দুম্বা ইত্যাদি কি জান্নাতে প্রবেশ করবে?


আসহাবে কাহফের কুকুর, সুলাইমান আ.-এর পিঁপড়া, সালেহ আ.-এর উটনী, ইসমাঈল আ.-এর দুম্বা ইত্যাদি কি জান্নাতে প্রবেশ করবে?


কোনো কোনো অসতর্ক বক্তার মুখে শোনা যায় আসহাবে কাহফের কুকুর, সুলাইমান আ.-এর পিঁপড়া, সালেহ আ.-এর উটনী, ইসমাঈল আ.-এর দুম্বা জান্নাতে প্রবেশ করবে। 

কেউ কেউ এর সাথে আরো যুক্ত করে বলে মূসা আ.-এর গাভী, বিলকিসের হুদহুদ, উযায়ের আ.-এর গাধা, ইউনুস আ.-এর মাছ ইত্যাদিও জান্নাতে প্রবেশ করবে।

কেউ এটিকে এভাবে বলে দশটি প্রাণী জান্নাতে প্রবেশ করবে; আসহাবে কাহফের কুকুর, সুলাইমান আ.-এর পিঁপড়া...।

যে যেভাবেই বলুক না কেন, এগুলোর কোনো ভিত্তি পাওয়া যায় না।

নির্ভরযোগ্য কোনো মারফু বা মাওকুফ রেওয়ায়েতে আমরা পাইনি। সুতরাং এগুলো বিশ্বাস করা ও বলা থেকে আমরা বিরত থাকা চাই। 

(দ্র. তাফসীরে রূহুল মা‘আনী খ. ১৫ পৃ. ২২৬)

Saturday 14 May 2016

কিয়ামতের মাঠে সর্বপ্রথম যে বিচারটি হবে


কিয়ামতের মাঠে কোটি কোটি অপরাধের মধ্যে আল্লাহ তা’য়ালা সর্বপ্রথম কোন অপরাধের বিচার কাজ শুরু করবেন বিষয়টি আপনি কখনো ভেবেছেন কি? এ বিষয়ে হাদিস শরীফে স্পষ্ট ব্যাখ্যা রয়েছে। আল কোরআন ও হাদিসের আলোকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হলো।

ইসলামে নরহত্যাকে নিষিদ্ধ করে সব ধরনের হত্যাকাণ্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। পূর্ববর্তী জাতিসমূহ এ কারণেই ধ্বংস হয়ে গেছে। আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের মাঠে মূলত এই হত্যাকাণ্ডের বিচারই সর্বপ্রথম শুরু করবেন।
সাময়িক উত্তেজনা বা সস্তা আবেগের বশবর্তীতে কাউকে অপহরণ, গুম, খুন, গুপ্তহত্যা, নানাবিধ নির্যাতন করে মারার মতো বাড়াবাড়ির অবকাশ ইসলামে নেই। এমনকি হত্যার প্রারম্ভিক বিষয় তথা অস্ত্র দিয়েও কাউকে ভয় দেখাতেও নিষেধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন তার ভাইয়ের দিকে অস্ত্র তাক না করে। কারণ সে জানে না, হয়ত শয়তান তার হাত থেকে তা বের করে দিতে পারে, ফলে সে জাহান্নামের গহ্বরে নিক্ষিপ্ত হবে।’ -সহিহ বোখারি

কাউকে হত্যা করা সামাজিক অনাচার ও অত্যাচারের অন্তর্ভুক্ত। নিজের স্বার্থ হাসিলের মোহে প্রতিশোধ গ্রহণের অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যারা নিরপরাধ মানুষ হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হয়, তারা মানবতাবর্জিত। পবিত্র কোরআনে নরহত্যাকে চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন, যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তোমরা তাকে হত্যা করো না।’ -সূরা বনি ইসরাইল: ৩৩

বিশ্বের সকল ধর্ম নরহত্যার মতো জঘন্য অপরাধ থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। নিরীহ মানুষকে অহেতুক মেরে ফেলার চেয়ে ভয়াবহ পাপ আর সমাজে নেই। ইসলাম ধর্মের মর্মবাণী হলো, ‘নরহত্যা মহাপাপ।’ নরহত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধে ইসলামি শরিয়তের দিকনির্দেশনাগুলো মেনে চলা উচিত এবং অন্যকেও ধর্মীয় জীবনযাপনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন। মানুষ যত বেশি নৈতিক শিক্ষা অর্জন ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলবে, তাদের জীবন থেকে তত বেশি অপরাধপ্রবণতা কমে যাবে।

হত্যাকাণ্ড প্রকাশ্যে করলে হয় প্রকাশ্য হত্যা, আর গোপনে করলে হয় গুপ্তহত্যা। উভয় হত্যাকাণ্ডের শাস্তি একই- মৃত্যুদণ্ড। প্রকাশ্যে বা গোপনে যেভাবেই হোক, হত্যাকারীকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। যদি সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে দুনিয়ার আদালতে এর ন্যায়বিচার করতে হবে। নতুবা তাকে আখেরাতের আদালতে কঠিন শাস্তি পেতে হবে।

পবিত্র কোরআনে হত্যাকাণ্ডকে মহাপাপ সাব্যস্ত করে ইচ্ছাকৃতভাবে একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানকে হত্যা করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে জাহান্নামে শাস্তির কঠোর বিধান সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘কোনো মুমিনের জন্য সমীচীন নয় যে, সে অন্য মুমিনকে হত্যা করবে, অবশ্য ভুলবশত করে ফেললে অন্য কথা। …আর কেউ স্বেচ্ছায় কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন ও তাকে অভিশপ্ত করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।’ -সূরা আন নিসা: ৯২-৯৩

হত্যা যেভাবে রাষ্ট্রীয় আইনে একটি ভয়াবহ অপরাধ, তেমনি পবিত্র কোরআন ও হাদিসের দৃষ্টিতেও জঘন্যতম অপরাধ। এ ধরনের অমানবিকতা দূর করতে হলে মানুষের মধ্যে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি করতে হবে। খোদাভীতি মনে থাকলে মানুষ কখনো কাউকে হত্যা করবে না। পরকালে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করার অনুভূতি জাগ্রত থাকলে মানুষের মধ্যে অপরাধের মাত্রা অনেক কমে যায়। কারণ, মানুষ জানে, তাকে একদিন আল্লাহর সামনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তখন নরহত্যার মতো মহাপাপের কথা জিজ্ঞাসা করলে সে কী জবাব দেবে? মানুষের অন্তরের এই অনুভূতি অন্যায় কাজ করতে বাধা দেয়। নরহত্যার শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘নরহত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে হত্যা করল।’ -সূরা আল মায়িদা: ৩২

ভয়ানক নরহত্যার জঘন্যতা ও হত্যাকারীর জন্য কঠোর শাস্তির কথা হাদিস শরিফেও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘দুনিয়া ধ্বংস করে দেওয়ার চেয়েও আল্লাহর কাছে ঘৃণিত কাজ হলো মানুষ হত্যা করা।’ –সুনানে তিরমিজি

কিয়ামতের দিন নরহত্যার বিচার করা হবে সবার আগে। তারপর অন্যান্য অপরাধের বিচার করা হবে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যে মোকদ্দমার ফয়সালা হবে, তাহলো রক্তপাত (হত্যা) সম্পর্কিত।’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম

অন্যায়ভাবে একজন মানুষ হত্যা করাকে কোরআনে কারিমে ‘সমগ্র মানবজাতিকে হত্যার’ নামান্তর আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, ‘যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে এবং যে কারো জীবনরক্ষা করে, সে যেন সবার জীবন রক্ষা করে।’ -সূরা আল মায়েদা : ৩২

হত্যার প্ররোচক কারণ হিসেবে হিংসা-বিদ্বেষ-ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে বলেছে ইসলাম। এ বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা একে অপরের সঙ্গে বিদ্বেষ পোষণ করো না, হিংসা করো না এবং একে অপরের পেছনে পড়ো না। আল্লাহর বান্দা সবাই ভাই ভাই হয়ে যাও। কোনো মুসলিমের জন্য তার ভাইকে তিনদিনের বেশি ত্যাগ করা হালাল নয়।’ -সহিহ বোখারি

নামায না পড়ার শাস্তি


যারা নামায পড়েনা তাদের জন্য আল্লাহ্ পাক পনেরটি আজাব নির্দিষ্ট করিয়া রাখিয়াছেন।পনেরটি আজাবের মধ্যে ছয়টি দুনিয়ায়, তিনটি মৃত্যুর সময়, তিনটি কবরের মধ্যে এবং বাকি তিনটি হাশরের মধ্যে দেয়া হইবে।

# দুনিয়াতে ছয়টি আযাবঃ
১. তাহার জীবনে কোনরূপ বরকত পাইবেনা।
২. আল্লাহ্ তার চেহারা হইতে নেক লোকের চিহ্ন উঠাইয়া লইবেন।
৩. যে যাহা কিছু নেক কাজ করবে, তাহার ছওয়াব পাইবেনা।
৪. তাহার দোয়া আল্লাহ্ পাকের নিকট কবুল হইবে না।
৫. আল্লাহ্ পাকের সমস্ত ফেরেশতা তাহার উপর অসন্তুষ্ট থাকবে।
৬. ইসলামের মূল্যবান নেয়ামত সমূহ হইতে বঞ্চিত করা হইবে।
# মৃত্যুর সময় আজাব তিনটিঃ
১. অত্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত হইয়া মৃতু্যবরণকরিবে।
২. ক্ষুধার্ত অবস্থায় মৃত্যু বরন করিবে।
৩. মৃত্যুকালে তাহার এত পিপাসা পাইবে যে,তাহার ইচ্ছা হইবে দুনিয়ার সমস্ত পানি পান করিয়া ফেলিতে।
# কবরের মধ্যে তিনটি আজাবঃ
১. তাহার কবর এমন সংকীর্ণ হবে যে তাহার এক পাশের হাড় অপর পাশের হাড়ের সংগে মিলিত হইয়া চূর্ণবিচূর্ণ হইয়া যাইবে।

২. তাহার কবরে, দিনরাত্রি সবসময় আগুন জ্বালাইয়া রাখা হবে।

৩. আল্লাহ্ তাহার কবরে একজন আজাবের ফেরেশ্তা নিযুক্ত করিবেন। তাহার হাতে লোহার মুগুর থাকবে। সে মৃত ব্যক্তিকে বলতে থাকবে যে,দুনিয়ায় কেন নামায পড় নাই। আজ তাহার ফল ভোগ কর। এই বলিয়া ফজর নামায না পড়ার জন্য ফজর হইতে জোহর পর্যন্ত, জোহর নামাযের জন্য জোহর থেকে আছর পর্যন্ত, আছরের নামাযের জন্য আছর থেকে মাগরিব পর্যন্ত, মাগরিবের নামাযের জন্য মাগরিব হইতে এশা পর্যন্ত এবংএশার নামাযের জন্য এশা হইতে ফজর পর্যন্ত লোহার মুগুর দ্বারা আঘাত করতে থাকবে।
আমাদের মধ্যে যারা মুসলিম আছে আসুন ভাই আমরা সকল ভাই ও বোনেরা নিয়মিত এবং সময়মত নামাজ পড়ি, অপর ভাইদের ও বলি নামাজ পরার জন্য। তাহলেই একমাত্র আমাদের সমাজ এ প্রকৃত শান্তি ও মুক্তি আসবে।
আরেকটা কথা আপনাদের মধ্যে যেসব ভাই/বোনেরা না পড়ে লাইক করেন তাদের বলছি,ভাই দয়া করে আগে পড়ুন আমরা চাই আমাদের আসব পোস্ট থেকে যেন আপনারা উপকৃত হন, আপনরা যেন কিছু শিখতে পারেন ,তাহলে আমরা সওয়াব পাব আর আপনা্রাতো পাবেনই ।
তাই ভাই দয়া করে আগে পড়ুন তার পর যদি ভাল লাগে তাহলে লাইক দিন। আর ভাই আপনারা এই পোস্ট শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের ও জানার সুযোগ করে দিতে পারেন।

নামাজে যা কিছু পড়ি তার পুরো অর্থ



আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের উপর যে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত/নামায ফরজ করেছেন তা আমরা বুঝে পড়ি না বা বোঝার চেষ্টাও করিনা(সালাত/নামায কেন এবং কীভাবে পড়বো তাও হয়তো জানি না)। হাশরের ময়দানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নামাযের হিশাবই সর্বপ্রথম নিবেন।
তাই আমাদের সকলকে নামাযের প্রতি যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। নিচে নামাযে আমরা কী পড়ি সে সম্পর্কে সংক্ষেপে তুলে ধরা হল।
১. বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। অর্থঃ পরমকরুনাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
২. তাকবীরে তাহরীমাঃ উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার অর্থঃ আল্লাহ সবচেয়ে বড়।
৩.ছানাপড়াঃ উচ্চারণঃ সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওবিহামদিকা ওতাবারাকাছমুকা ওতাআ‘লাজাদ্দুকা ওলাইলাহাগইরুক। অর্থঃ আয়আল্লাহ! আমি তোমারই পবিত্রতা বর্ণনা করিতেছি তোমার প্রশংসার সহিত, বরকতময় তোমার নাম। সুউচ্চ তোমার মহিমা। এবং তুমি ভিন্ন কোন মা‘বুদনাই।
৪.আউযুবিল্লাহ পড়াঃ উচ্চারণঃ আউযুবিল্লা হিমিনাশ শায়তানির রাঝিম। অর্থঃ আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
৫. সূরায়ে ফাতিহা পড়াঃ উচ্চারণঃ (১)আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন, (২)আররাহমানির রাহিম, (৩)মালিকি ইয়াওমিদ্দিন, (৪)ইয়্যাকা না‘বুদু ওইয়্যাকা নাসতাঈন, (৫)ইহদিনাসসিরাতাল মুসতাকীম, (৬)সিরাতল্লাযিনা আনআমতা আলাইহিম, (৭)গাইরিলমাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্দ—লিন।(আমীন)

অর্থঃ (১)সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, (২)যিনি সমস্ত জগতসমূহের সৃষ্টিকর্তা, রক্ষাকর্তা, পালনকর্তা। (৩)যিনি দয়াময়, অত্যন্ত
দয়ালু, যিনি বড় মেহেরবান। (৪)যিনি কর্মফল দিবসের একচ্ছত্র মালিক। (৫)আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদাত করিতেছি এবং তোমারই নিকট সাহায্য প্রর্থনা করিতেছি। (৬)আমাদেরকে দোখাও সঠিক সরল পথ। (৭)তাদের পথ যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করিয়াছ। যারা তোমার অনুগ্রহের পাত্র হইয়াছেন। তাদের পথ নয় যাদের প্রতি তোমার পক্ষ থেকে গযব নাযিল হয়েছে। বিঃ দ্রঃ উক্ত সূরা(ফাতিহা) শেষ করার পর আমীন বলতে হবে এবং সূরা ফাতিহা তথা আলহামদুর সাথে অন্য সূরা মিলানো ওয়াজিব। তবে ফরয নামাযের প্রথম দুই রাকাতে তা নির্দিষ্ট। সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর যে ১০ টি সূরা আমরা অধিক সময় পাঠ করে থাকি, সেগুলো অর্থসহ পেতে ভিজিট করুন।
৬. রুকুর তাসবীহ পড়াঃ উচ্চারণঃ সুবহানা রাব্বিয়াল আযিম।
অর্থঃ আমার মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা করিতেছি।
৭. রুকু হইতে উঠিবার সময়ের তাসবীহ পড়াঃ উচ্চারণঃ সামিআল্লাহুলিমান হামিদাহ
অর্থঃ যে আল্লাহর প্রশংসা করিয়াছে, আল্লাহ তাহার প্রশংসা কবুল করিয়াছেন।
৮. রুকু থেকে উঠে দাড়িয়ে থেকে পড়তে হবেঃ উচ্চারণঃ রাব্বানা লাকাল হামদ হামদান কাছীরান ত্বাইয়্যেবান মুবারাকানফিহ। অর্থঃ হে আমাদের প্রতিপালক অধিক অধিক প্রশংসা ও পবিত্রতা তোমারই। (এখানে রাব্বানা লাকাল হামদ পর্যন্ত পড়লেও হবে।)
৯. সেজদায় তাসবীহ পড়াঃ উচ্চারণঃ সুবহানা রাব্বিয়াল আ‘লা।
অর্থঃ আমার মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা করিতেছি।
১০. উভয় বৈঠকে(বসা অবস্থায়) তাশাহুদ বা আত্তাহিয়্যাতু পড়াঃ উচ্চারণঃ আত্যাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওস্ সলাওয়াতু ওত্ তয়্যেবাতু আসসালামুআলাইকা আয়্যুহান্নাবিয়্যু ওরাহমাতুল্লাহি ওবারাকাতুহু আসসালামুআলাইনা ওয়া‘লা ঈবাদিল্লাহি সসলিহিনা আশহাদুআল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াশহাদু আন্না মুহাম্মাদাং আবদুহু ওয়ারাসূলুহ।
অর্থঃ সমস্ত মৌখিক ইবাদাত, সমস্ত শারীরিক ইবাদাত এবং সমস্ত পবিত্র বিষয় আল্লাহ তা‘আলার জন্য। হে নবী! আপনার উপর শান্তি ও তাহার বরকতসমূহ নাযিল হউক। আমাদের প্রতি ও আল্লাহ তা‘আলার নেক বান্দাদের প্রতি তাঁহার শান্তি বর্ষিত হউক। আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত আর কোন মা‘বুদ নাই। আমি আরো সাক্ষ্য দিতেছি যে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁহার বান্দা ও রাসূল।
১১.দুরুদ শরীফ পড়াঃ উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা সল্লেআ‘লা মুহাম্মাদিও ও‘য়ালা আলি মুহাম্মদ কামা সল্লেইতা‘আলা ইবরাহিমা ওয়া‘লা আলি ইবরাহিমা ইন্নাকা হামিদুম্মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিকআ‘লা মুহাম্মাদিও ও‘য়ালা আলি মুহাম্মদ কামা বারাকতা‘আলা ইবরাহিমা ওয়া‘লা আলি ইবরাহিমা ইন্নাকা হামিদুম্মাজিদ।

অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি রহমত বর্ষণ কর মুহাম্মদ(সা.)-এর প্রতি ও তাঁহার পরিবার পরিজনের প্রতি, যেমন রহমত বর্ষণ করিয়াছ ইবরাহীম(আ.)-এর প্রতি ও তাঁহার পরিবার পরিজনের প্রতি। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সন্মানিত। হে আল্লাহ! তুমি বরকত নাযিল কর মুহাম্মদ(সা.)-এর প্রতি ও তাঁহার পরিবার পরিজনের প্রতি, যেমন বরকত নাযিল করিয়াছ ইবরাহীম(আ.)-এর প্রতি ও তাঁহার পরিবার পরিজনের প্রতি। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সন্মানিত।

উত্তম মৃত্যু-পরিণতির ৭টি বিশেষ আলামত



মানুষের শেষ পরিণতি ভালো-মন্দ হওয়ার ব্যাপারে শরী‘আত প্রণেতা কিছু নিদর্শন দিয়েছেন। কারো মধ্যে এসব ভালো আলামত পাওয়া গেলে তার উত্তম পরিণতির সুসংবাদ, তবে এসব কিছু মহান আল্লাহ তাআলার ওপরই ছেড়ে দিতে হবে।
ক- যার সর্বশেষ বাক্য কালেমায় শাহাদাত হবে তার ব্যাপারে হাদীসে উত্তম পরিণতির শুভসংবাদ এসেছে, মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ كَانَ آخِرُ كَلَامِهِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ»
“যার সর্বশেষ বাক্য হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সে জান্নাতে প্রবেশ করবে”। [মুসতাদরক হাকিম, হাদীস নং ১২৯৯। তিনি হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। ]
মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি অসুস্থ অবস্থায় বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এমন কিছু কথা শুনেছি যা এতদিন গোপন রেখেছিলাম। তাঁকে বলতে শুনেছি,
«مَنْ كَانَ آخِرُ كَلَامِهِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ»
“যার সর্বশেষ বাক্য হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে”। [মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ২২০৩৪, আল্লামা শুয়াইব আরনাউত হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
খ- মৃত্যুর সময়ে ললাট ঘর্মাক্ত হওয়া মুমিনের আলামত। আব্দুল্লাহ ইবন বুরাইদাহ রহ. তার পিতা বুরায়দা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
«مَوْتُ الْمُؤْمِنِ بِعَرَقِ الْجَبِينِ»
“মুমিন ব্যক্তি ঘর্মাক্ত ললাটের সাথে মৃত্যুবরণ করে থাকে”। (মৃত্যুর সময়ে ললাট ঘর্মাক্ত হওয়া মুমিনের আলামত।) [সুনান নাসাঈ, হাদীস নং ১৮২৮, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ২৩০২২, আল্লামা শুয়াইব আরনাউত হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
গ- জুমু‘আর দিনে বা রাতে মারা গেলে। আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَمُوتُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ أَوْ لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ إِلَّا وَقَاهُ اللهُ فِتْنَةَ الْقَبْرِ »
“কোনো মুমিন যদি জুমু‘আর দিন বা রাতে মারা যায়, তবে আল্লাহ তাআলা তাকে কবরের ফিতনা বা পরীক্ষা থেকে রক্ষা করবেন”। [মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ৬৫৮২, আল্লামা শুয়াইব আরনাউত হাদীসটিকে দ‘য়ীফ বলেছেন। তিরমিযী, হাদীস নং ১০৭৪, তিনি হাদীসটিকে গরীব বলেছেন। আলবানী রহ. হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।]
ঘ- যুদ্ধের ময়দানে শহীদ হওয়া।
﴿وَلَا تَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ قُتِلُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ أَمۡوَٰتَۢاۚ بَلۡ أَحۡيَآءٌ عِندَ رَبِّهِمۡ يُرۡزَقُونَ ١٦٩ فَرِحِينَ بِمَآ ءَاتَىٰهُمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦ وَيَسۡتَبۡشِرُونَ بِٱلَّذِينَ لَمۡ يَلۡحَقُواْ بِهِم مِّنۡ خَلۡفِهِمۡ أَلَّا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ ١٧٠ ۞يَسۡتَبۡشِرُونَ بِنِعۡمَةٖ مِّنَ ٱللَّهِ وَفَضۡلٖ وَأَنَّ ٱللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجۡرَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ١٧١﴾ [ال عمران: ١٦٩، ١٧١]
“আর যারা আল্লাহর পথে জীবন দিয়েছে, তাদেরকে তুমি মৃত মনে করো না; বরং তারা তাদের রবের নিকট জীবিত। তাদেরকে রিযিক দেওয়া হয়। আল্লাহ তাদেরকে যে অনুগ্রহ করেছেন, তাতে তারা খুশি। আর তারা উৎফুল্ল¬ হয়, পরবর্তীদের থেকে যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হয় নি তাদের বিষয়ে। এজন্য যে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে নি‘আমত ও অনুগ্রহ লাভে খুশি হয়। আর নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের প্রতিদান নষ্ট করেন না”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৯-১৭১]
মিকদাম ইবনে মা‘দীকারিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لِلشَّهِيدِ عِنْدَ اللَّهِ سِتُّ خِصَالٍ: يَغْفِرُ لَهُ فِي أَوَّلِ دُفْعَةٍ مِنْ دَمِهِ، وَيُرَى مَقْعَدَهُ مِنَ الْجَنَّةِ، وَيُجَارُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَيَأْمَنُ مِنَ الْفَزَعِ الْأَكْبَرِ، وَيُحَلَّى حُلَّةَ الْإِيمَانِ، وَيُزَوَّجُ مِنَ الْحُورِ الْعِينِ، وَيُشَفَّعُ فِي سَبْعِينَ إِنْسَانًا مِنْ أَقَارِبِهِ »
“শহীদের জন্য আল্লাহর নিকট ছয়টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তার দেহের রক্তের প্রথম ফোঁটাটি বের হতেই তিনি তাকে ক্ষমা করেন এবং জান্নাতে তার ঠিকানা তাকে দেখানো হয়; কবরের আযাব থেকে তাকে রক্ষা করা হয়; (কিয়ামতের) ভয়ংকর ত্রাস থেকে সে নিরাপদ থাকবে; তাকে ঈমানের চাদর পরানো হবে; আয়তলোচনা হুরের সাথে তার বিবাহ দেওয়া হবে এবং তার নিকট আত্মীয়দের মধ্য থেকে সত্তরজনের পক্ষে তাকে শাফা‘আত করার অনুমতি দেওয়া হবে”। [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৭৯৯, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। তিরমিযী, হাদীস নং ১৬৬৩।]
ঙ- আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে গাজী হয়ে ফিরে আসার পরে মারা গেলে, প্লেগ রোগে মারা গেলে, পেটের পীড়ায় ও পানিতে ডুবে, অগ্নিদগ্ধ হয়ে বা গর্ভাবস্থায় মারা যাওয়া শহীদ এবং মুমিনের তা শুভ লক্ষণ।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
«مَا تَعُدُّونَ الشَّهِيدَ فِيكُمْ؟» قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، مَنْ قُتِلَ فِي سَبِيلِ اللهِ فَهُوَ شَهِيدٌ، قَالَ: «إِنَّ شُهَدَاءَ أُمَّتِي إِذًا لَقَلِيلٌ»، قَالُوا: فَمَنْ هُمْ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: «مَنْ قُتِلَ فِي سَبِيلِ اللهِ فَهُوَ شَهِيدٌ، وَمَنْ مَاتَ فِي سَبِيلِ اللهِ فَهُوَ شَهِيدٌ، وَمَنْ مَاتَ فِي الطَّاعُونِ فَهُوَ شَهِيدٌ، وَمَنْ مَاتَ فِي الْبَطْنِ فَهُوَ شَهِيدٌ»، قَالَ ابْنُ مِقْسَمٍ: أَشْهَدُ عَلَى أَبِيكَ فِي هَذَا الْحَدِيثِ أَنَّهُ قَالَ: «وَالْغَرِيقُ شَهِيدٌ»
“তোমরা তোমাদের মধ্যকার কাদেরকে শহীদ বলে গণ্য কর? তারা বললেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয় সেই তো শহীদ। তিনি বললেন, তাহলে তো আমার উম্মাতের শহীদের সংখ্যা অতি অল্প হবে। তখন তারা বললেন, তা হলে তারা কারা ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ জিহাদের ময়দানে নিহত হয় সে শহীদ। ষে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে গিয়ে মারা যায় সেও শহীদ। যে ব্যক্তি প্লেগে মারা যায় সে শহীদ, যে ব্যক্তি উদরাময়ে মারা যায় সেও শহীদ। ইবন মিকসাম বলেন, আমি তোমার পিতার উপর এ হাদীসের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আরও বলেছেন, এবং পানিতে ডুবে মারা যায় এমন ব্যক্তিও শহীদ”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯১৫।]
জাবির ইবন আতীক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَاءَ يَعُودُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ ثَابِتٍ، فَوَجَدَهُ قَدْ غُلِبَ، فَصَاحَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمْ يُجِبْهُ فَاسْتَرْجَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَقَالَ: غُلِبْنَا عَلَيْكَ يَا أَبَا الرَّبِيعِ، فَصَاحَ النِّسْوَةُ، وَبَكَيْنَ فَجَعَلَ ابْنُ عَتِيكٍ يُسَكِّتُهُنَّ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «دَعْهُنَّ، فَإِذَا وَجَبَ فَلَا تَبْكِيَنَّ بَاكِيَةٌ» قَالُوا: وَمَا الْوُجُوبُ؟ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «الْمَوْتُ» قَالَتِ ابْنَتُهُ: وَاللَّهِ إِنْ كُنْتُ لَأَرْجُو أَنْ تَكُونَ شَهِيدًا، فَإِنَّكَ كُنْتَ قَدْ قَضَيْتَ جِهَازَكَ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ قَدْ أَوْقَعَ أَجْرَهُ عَلَى قَدْرِ نِيَّتِهِ، وَمَا تَعُدُّونَ الشَّهَادَةَ؟» قَالُوا: الْقَتْلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ تَعَالَى، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” الشَّهَادَةُ سَبْعٌ سِوَى الْقَتْلِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ: الْمَطْعُونُ شَهِيدٌ، وَالْغَرِقُ شَهِيدٌ، وَصَاحِبُ ذَاتِ الْجَنْبِ شَهِيدٌ، وَالْمَبْطُونُ شَهِيدٌ، وَصَاحِبُ الْحَرِيقِ شَهِيدٌ، وَالَّذِي يَمُوتُ تَحْتَ الْهَدْمِ شَهِيدٌ، وَالْمَرْأَةُ تَمُوتُ بِجُمْعٍ شَهِيدٌ »
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুল্লাহ ইবন সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহুর রোগের খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য আসেন। এ সময় তিনি তাঁকে বেহুশ অবস্থায় পান। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে জোরে ডাকেন, কিন্তু তিনি কোনো জওয়াব দেন নি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ”ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজিঊন” পাঠ করেন এবং বলেন, হে আবু রাবী! আমি তোমার ব্যাপারে পরাস্ত হয়েছি। এ কথা শুনে মহিলারা চীৎকার দিয়ে কাঁদা শুরু করে। তখন ইবন আতীক রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের শান্ত হতে বলেন। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তাদের ছেড়ে দাও (অর্থাৎ কাঁদতে দাও)। অবশ্য যখন ওয়াজিব হবে, তখন যেন কোনো ক্রন্দনকারী আর না কাঁদে। তখন তারা জিজ্ঞাসা করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ওয়াজিব হওয়ার অর্থ কী? তিনি বলেন, মৃত্যু”। (বর্ণনাকারী বলেন) তখন আব্দুল্লাহ ইবন সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহুর কন্যা বললেন, আল্লাহর শপথ! আমার তো এরূপ ধারণা ছিল যে, তুমি শহীদ হবে। কেননা, তুমি যুদ্ধের জন্য যাবতীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ করছিলে। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাকে তার নিয়তের সাওয়াব প্রদান করবেন। তোমরা শাহাদত বলতে কী মনে কর? তিনি বলেন, আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়ে যাওয়াকে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হওয়া ছাড়াও আরো সাত ধরনের শহীদ আছে যথা, মহামরীতে যে মারা যায় সেও শহীদ, পানিতে ডুবে যে মারা যায় সেও শহীদ, পক্ষাঘাতে যে মারা যায় সেও শহীদ, পেটের রোগের কারণে (কলেরা, ডায়রিয়া ইত্যাদিতে) যে মারা যায় সেও শহীদ, অগ্নিদগ্ধ হয়ে যে মারা যায় সেও শহীদ, কোনো কিছুর নিচে চাপা পড়ে যে মারা যায় সেও শহীদ এবং যে মহিলা গর্ভাবস্থায় মারা যাবে, সেও শহীদ”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৩১১১। আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
চ- কেউ নিজের অধিকার তথা জীবন, সম্পদ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই ইত্যাদির কারণে মারা গেলে শহীদ। আর শহীদ হয়ে মারা যাওয়া শুভ লক্ষণ। আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
«مَنْ قُتِلَ دُونَ مَالِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ»
যে ব্যক্তি নিজের ধনসম্পদ রক্ষার্থে নিহত হয়, সে শহীদ”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪৮০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪১।]
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ أُتِيَ عِنْدَ مَالِهِ، فَقُوتِلَ فَقَاتَلَ فَقُتِلَ، فَهُوَ شَهِيدٌ»
কোনো ব্যক্তি অপর ব্যক্তির ধনসম্পদ লুট করতে চাইলে সে তাতে বাঁধা দিতে গিয়ে তার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে নিহত হলে শহীদ গণ্য হয়”। [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৫৮১, ‬আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। ]
ছ- আল্লাহর রাস্তায় সীমান্ত পাহারা দেওয়ার সময় মারা গেলে শহীদ। সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
«رِبَاطُ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ خَيْرٌ مِنْ صِيَامِ شَهْرٍ وَقِيَامِهِ، وَإِنْ مَاتَ جَرَى عَلَيْهِ عَمَلُهُ الَّذِي كَانَ يَعْمَلُهُ، وَأُجْرِيَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ، وَأَمِنَ الْفَتَّانَ»
একটি দিবস ও একটি রাতের সীমান্ত প্রহরা একমাস সিয়াম পালন এবং ইবাদতে রাত জাগার চাইতেও উত্তম। আর যদি এ অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে, তাতে তার এ আমলের সাওয়াব জারী থাকবে, তার (শহীদ অবস্থায়) রিযিক অব্যাহত রাখা হবে এবং সে ব্যক্তি ফিতনাসমূহ থেকে নিরাপদে থাকবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯১৩।]
ফুদালা ইবন উবায়দ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«كُلُّ مَيِّتٍ يُخْتَمُ عَلَى عَمَلِهِ إِلَّا الَّذِي مَاتَ مُرَابِطًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَإِنَّهُ يُنْمَى لَهُ عَمَلُهُ إِلَى يَوْمِ القِيَامَةِ، وَيَأْمَنُ مِنْ فِتْنَةِ القَبْرِ»، وَسَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «المُجَاهِدُ مَنْ جَاهَدَ نَفْسَهُ»
“প্রত্যেক মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর সাথে তার আমলের পরিসমাপ্তি হয়। কিন্তু যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে পাহারা দানরত অবস্থায় মারা যায় আল্লাহ তাআলা কিয়ামত পর্যন্ত তার আমল বৃদ্ধি করতে থাকেন এবং তাকে কবরের ফিতনা থেকে নিরাপদে রাখবেন। (তিনি আরো বলেন,) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি যে, প্রকৃত মুজাহিদ হলো সেই, যে স্বীয় নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ করে। [তিরমিযী, হাদীস নং ১৬২১। তিনি হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন। ‬আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। ]

মৃত্যুর সাথে সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবেন যিনি


রাসুল [সা] বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরে আয়তুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা নেই৷”

আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্যেই মুমিন বান্দারা তার সকল আদেশ-নিষেধ পালন করে থাকে এবং বিভিন্ন ইবাদত করে থাকে। তবে বিশেষ কিছু আমল এমন আছে, যা পালন করার দ্বারা মুমিন বান্দারা মর্যাদায় অনেকের থেকে অগ্রসর হয়ে যায় এবং যারা সেইসব আমল করে তাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালা এতোটাই খুশি হবেন, যে ওই ব্যক্তিকে মৃত্যুর সাথে সাথেই জান্নাতে প্রবেশের অধিকারী হয়ে যাবে।

এ প্রসঙ্গে একটি হাদিসে এসছে, রাসুল [সা] বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরে আয়তুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা নেই৷” [ইবনে হিব্বান, সুনানে নাসাঈ]

হিন্দুদের কি বিয়ে করা যায়?



ইসলাম নারী-পুরুষের মধ্যে বিবাহ বন্ধনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে নারী ও পুরুষ তাদের জীবন সঙ্গী বেছে নেন এবং এর মাধ্যমে একটি পরিবার গঠিত হয়। এই পরিবারে ছায়াতলেই নীতি-নৈতিকতা ও গভীর ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে বেড়ে ওঠে ভবিষ্যত প্রজন্ম।

আর ইসলাম যেহেতু পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান, তাই পরিবার গঠনের ক্ষেত্রে তার রয়েছে সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা। যে নারী ও পুরুষের মিলনে পরিবার গঠিত হবে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর ইসলাম বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। অর্থ্যাৎ জীবন সঙ্গী বা সঙ্গিনী বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে ‘ইসলাম ধর্মে গভীর বিশ্বাস থাকা’ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিষয়টি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে 
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন:
وَلاَ تَنكِحُواْ الْمُشْرِكَاتِ حَتَّى يُؤْمِنَّ وَلأَمَةٌ مُّؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِّن مُّشْرِكَةٍ
“আর তোমরা মুশরিক নারীদের বিয়ে করো না,যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। মুশরিক নারী তোমাদের দৃষ্টিতে সুন্দরী মনে হলেও মু’মিন ক্রীতদাসী মুশরিক নারীর চেয়ে উত্তম।” (সুরা বাকারা-২২১)

এ আয়াতে মহান আল্লাহ মু’মিন নারীকে বিয়ে করার নির্দেশ দিয়ে বলছেন, যদি ঈমানদার নারী পাওয়া না যায় তাহলে মু’মিন দাসীকে বিয়ে করতে হবে। কারণ, মুশরিক নারীর চেয়ে মু’মিন দাসী উত্তম। এর কারণ হচ্ছে, মুশরিক কিংবা মুর্তিপুজক নারীর সঙ্গে পরিবার গঠন করে ওই পরিবার থেকে ভাল কিছু আশা করা যায় না।

হিন্দু বা মুশরিক নারী শিশুকাল থেকে তার পরিবারে মুর্তিপূজার যে প্রচলন দেখে এসেছে তা তার জীবনের অংশ হয়ে গেছে। মনে-প্রাণে সে ওই ধর্মবিশ্বাসকে ধারণ করেছে। ওই বাতিল বা মিথ্যা বিশ্বাস তার চোখের সামনে এমন একটি আবরণ তৈরি করে দিয়েছে যার ফলে তার পক্ষে সত্য এবং ইসলামের আবেদন উপলব্ধি করা কঠিন।

এমন একজন নারী তার কথা-বার্তা, আচার-আচরণ দিয়ে তার আশপাশের লোকজনকে নিজের ধর্মবিশ্বাসের দিকে টেনে নেয়ার চেষ্টা করে; যে বিশ্বাস মানুষকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। এ বিষয়টি একজন মুসলমানের জন্য কোনো অবস্থায়ই কাম্য হতে পারে না।

পক্ষান্তরে একজন মুসলিম পুরুষ আল্লাহকে মেনে চলে এবং তাকে ভয় করে। এ ছাড়া, একজন প্রকৃত মুসলমানের কাজ হচ্ছে নিজের আচার-আচরণের মাধ্যমে মুশরিকদেরকে ইসলামের পথে দাওয়াত দেয়া।

কোনো মুসলিম পুরুষ যদি হিন্দু নারীকে বিয়ে করে তাহলে তাদের দু’জনের মধ্যে এই চিন্তা ও আচার-আচরণগত বিশাল পার্থক্য তাদের মধ্যে চরম মতানৈক্য সৃষ্টি করবে। তাদের মধ্যকার এ মতপার্থক্য দিন দিন বেড়ে যাবে এবং তা ঝগড়া-বিবাদে রূপ নেবে। এ অবস্থায় পারিবারিক অশান্তি ও কলহ অনিবার্য হয়ে পড়বে। এ ধরনের একটি পরিবারে যে সন্তান বেড়ে উঠবে সে কোনো অবস্থায়ই মু’মিন কিংবা আল্লাহর নেক বান্দা হতে পারবে না।

এ কারণে, ইসলামের বিশিষ্ট ফকীহগণ হিন্দুসহ সব মুশরিক নারী ও পুরুষের সঙ্গে মু’মিন পুরুষ ও নারীর বিয়েকে হারাম বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

অবশ্য এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট আর তা হলো, একজন মুসলমানের কাছে তার ধর্মীয় বিশ্বাস এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে, সে পার্থিব জীবনের জন্য যা কিছু চায় তার সবকিছুই ওই ধর্মবিশ্বাসকে বিকশিত করার পাথেয় হিসেবে চায়। সে ইসলামের জন্য সবকিছু বিলিয়ে দেয় এবং যে কোন মূল্যে দ্বীন ইসলাম প্রচার করে। এ ধরনের কোনো ব্যক্তি যদি কোনো হিন্দু বা মুশরিক নারীকে ভালোবেসে থাকে তাহলে তাকেও ইসলামের দাওয়াত দেয়া তার কর্তব্য।

এ অবস্থায় ওই নারী যদি ইসলামের সুমহান আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুসলমান হয়ে যায়, তাহলে সে একদিকে একজন মুশরিককে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করার সওয়াব পাবে এবং অন্যদিকে তার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতেও তার আর কোন বাধা থাকবে না।

সুত্র:
১) সূরা বাকারা, ২২১নং আয়াত
২) মোহাম্মদ হোসেন তাবাতায়ী, তাফসিরুল মিজান, ২খ: পৃ:২০৯, বিরুত, ১ম প্রকাশনা ১৪১৭
৩) ইমাম খোমেনী (রহ:)’র ফতোয়ার বই তাহরিউল ওসিলা,পৃ:২৫২
সূত্র: রেডিও তেহরান

মোবাইলের মাধ্যমে বিয়ে করার জন্য ইসলামী শর্ত কি?


বিয়ে সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত হল, একই মজলিসে বর- কনে স্বশরীরে উপস্থিত থেকে সাক্ষীগণের সম্মুখে বিবাহের ইজাব-কবুল তথা (প্রস্তাব- কবুল) গ্রহণ করবে। 

আর তারা উপস্থিত হতে না পারলে, তাদের পক্ষ থেকে বিবাহকার্য সম্পাদনের জন্য কোন প্রতিনিধি নিয়োগ করবে। 

তিনিস্বাক্ষীগণের উপস্থিতিতে অপরের বিবাহের প্রস্তাব দিবেন বা কবুল করবেন। আর টেলিফোনের মাধ্যমে ইজাব-কবুল করা গেলেও বর-কনে বা

তদের প্রতিনিধির উপস্থিতি পাওয়া যায় না।

তাই শরীয়তের দৃষ্টিতে মোবাইল/ফোনে বিয়ে সহীহ হয় না। তবে মোবাইল/ফোনের মাধ্যমে বিবাহ
শুদ্ধ হওয়ার একটা পদ্ধতি আছে, তা হলো- উভয় পক্ষের কোন এক পক্ষ থেকে ফোনের মাধ্যমে এক ব্যক্তিকে নিজের উকিল বানাবে। তিনি উকিল হয়ে দু’জন স্বাক্ষীর সামনে প্রস্তাব করবেন। 

অপর পক্ষ তখন কবুল করবে। তাতে বিয়ে হয়ে যাবে। তেমনিভাবে কনে টেলিফোনে বরকে নিজের বিয়ের উকিল বানাতে পারে। 

তখন বর যদি দু’জন স্বাক্ষীর সামনে বলে যে, অমুক মহিলা তার বিয়ের জন্য আমাকে উকিল বানিয়েছে। আমি তাকে এত টাকার বিনিময়ে বিয়ে করলাম। এতেও বিবাহ সহীহ হয়ে যাবে।

 (দেখুনঃ খুলাসাতুল ফাতাওয়া, জাদীদ ফিকহী মাসায়িল)

কখন কোন নামাজ আদায় করা মাকরুহ


সূর্যোদয়ের সময়, মধ্যাহ্নে সূর্যের মধ্যাকাশে অবস্থানকালে এবং সূর্যাস্তের সময় সালাত জায়েয নেই। কেননা, ‘উকবা ইবন ‘আমির (রা.) বলেছেন- তিনটি ওয়াকত রাসূলুল্লাহ্ (সা.) আমাদেরকে সালাত আদায় করতে এবং আমাদের মৃতদের দাফন করতে নিষেধ করেছেনঃ সূর্যোদয় কালে, সূর্য উপরে উঠে যাওয়া পর্যন্ত; মধ্যাহ্ন কালে সূর্য হেলে পড়া পর্যন্ত; আর যখন সূর্য অস্ত যাওয়ার উপক্রম হয়, তখন থেকে অস্ত যাওয়া পর্যন্ত। তার বক্তব্য এর উদ্দেশ্য হলো জানাযার সালাত্।

কেননা (ইজমা দ্বারা প্রমাণিত যে, উক্ত সময়) দাফন করা মাকরূহ নয়। আলোচ্য হাদীছ তার অর্থ-ব্যপকতার কারণে ইমাম শাফিঈ (র.) এর বিপক্ষে প্রমাণ। ফরজসমূহ এবং মক্কাকে বিশিষ্ট করার উদ্দেশ্য এবং ইমাম আবূ ইউসূফ (র.) এর বিপক্ষে প্রমাণ জুমুআর দিন মধ্যাহ্ন কালে নফল সালাত জাইয করার উদ্দেশ্য। ইমাম কুদূরী (র.) বলেন, ওই সময়ে জানাযার সালাত জাইয হবে না। আমাদের বর্ণিত হাদীছের দলীল মুতাবিক। সাজদায়ে তিলাওয়াতও জায়েয হবে না। কেননা, তা সালাতেরই অংশ বিশেষ। তবে সূর্যাস্তের সময় সে দিনের আসর আদায় করা যাবে।

সালাত ওয়াজিব হওয়ার বা হেতু হচ্ছে সময়ের সেই অংশ, যা বিদ্যমান আছে। (অর্থাত্ সালাত শুরুর পূর্ব মুহূর্ত)। কেননা, হেতুর সম্পর্ক যদি সমগ্র সময়ের সাথে হয়, তাহলে সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরে সালাত আদায় করা ওয়াজিব হয়। আর সময়ের বিগত অংশের সাথে যদি সম্পর্কিত হয়, তাহলে শেষ সময়ে সালাত আদায়কারী হয় সালাত কাযাকারী। বিষয়টি যখন এমনই হলো, তবে তো সে যেমন তার উপর ওয়াজিব হয়েছে, তেমনই আাদায় করেছে। আর অন্যান্য সালাত এর ব্যতিক্রম। কেননা সেগুলো পূর্ণাংগ সময়ে ওয়াজিব হয়েছে, সুতরাং অপূর্ণাংগ সময়ে তা আদায় হতে পারে না।

হিদায়া গ্রন্থকার বলেন, জানাযার সালাত ও তিলাওয়াতের সাজদা সম্পর্কে উল্লেখিত নাজাইযের অর্থ হলো মাকরূহ হওয়া। সুতরাং ঐ সময়ে কেউ যদি জানাযার সালাত আদায় করে কিংবা তখন সাজদার আয়াত তিলা্ওয়াত করে উক্ত তিলাওয়াতের সাজদা করে তাহলে জাইয হবে। কেননা, যেমন নাকিস সময়ে তা ওয়াজিব হয়েছে, তেমনি নাকিস সময়ে তা আদায় করা হয়েছে। কেননা জানাযা উপস্থিত হওয়া ও তিলাওয়াত করার মাধ্যমেই তা ওয়াজিব হয়। ফজরের পরে সূর্যোদয় পর্যন্ত নফল পড়া, এবং আসরের পরে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত নফল আদায় করা মাকরূহ।

কেননা বর্ণিত আছে যে, নবী (সা.) তা নিষেধ করেছেন। তবে এই দুই সময়ে কাযা সালাত ও তিলাওয়াতের সাজদা আদায় করতে পারে এবং জানাযার সালাত আদায় করতে পারে। কেননা, এই মাকরূহ হওয়া ছিলো ফরযের মর্যাদার ভিত্তিতে, যেন সম্পূর্ণ সময়টা সালাতে মশগুল-তুল্য হয়ে যায়। (এই মাকরূহত্ব) সময়ের নিজস্ব কোন প্রকৃতির কারণে নয়। সুতরাং ফরজসমূহের ক্ষেত্রে এবং যে সকল ইবাদত স্বকীয়ভাবে ওয়াজিব হয়েছে, যেমন, তিলাওয়াতের সিজদা, সেগুলোর ক্ষেত্রে সময়ের মাকরূহ হওয়ার হুকুম প্রকাশ পাবে না। আর সালাত (ও মানতকৃত নামায) এর ক্ষেত্রে তা প্রকাশ পাবে।

কেননা উক্ত ইবাদতে আবশ্যকতা তার নিজের পক্ষ থেকে সৃষ্ট কারণের সাথে সম্পৃক্ত। তাওয়াফের রাকাআতদ্বয়ের ক্ষেত্রে মাকরূহ প্রকাশ পাবে। এবং ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রেও মাকরূহ হওয়া প্রকাশ পাবে, যে নফল সালাত শুরু করে তা ভংগ হয়েছে। কেননা উক্ত সালাতের ওয়াজিব হওয়া তার নিজ কারণে নয়, অন্য কারণে। আর তা হলো তাওয়াফ খতম করা এবং শুরু করা সালাতকে নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করা। ফজরের উদয়ের পর ফজরের দু’রাকাআতের অধিক নফল আদায় মাকরূহ।

কেননা সালাতের প্রতি আগ্রহ সত্ত্বেও উক্ত দুই রাকাআতের অতিরিক্ত কিছু নবী করীম (সা.) আদায় করেন নি। সূর্যাস্তের পর ফরযের পূর্বে কোন নফল আদায় করবে না। কেননা তাতে মাগরিবকে বিলম্ব করা হয়। তদ্রূপ জুমুআর দিন ইমাম যখন খুতবার জন্য (হুজরা থেকে) বের হবেন, তখন থেকে খুতবা শেষ হওয়া পর্যন্ত নফল আদায় করবে না। কেননা তাতে খুতবা শোনা থেকে অন্য-মনস্কতা হয়।

যে নামাজে পাওয়া যাবে পরিপূর্ণ হজ ও ওমরাহর সওয়াব


যে নামাজে পাওয়া যায় পরিপূর্ণ হজ ও ওমরাহর সওয়াব। একটু কষ্ট হলেও ফজরের নামাজ আদায় করে সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকার চেষ্টা করি।

হজরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করে, অতঃপর সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহর জিকিরে থাকে, এরপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করে, সে পরিপূর্ণ একটি হজ ও ওমরাহর সওয়াব পাবে।(তিরমিজি : ৫৮৬)

এ ছাড়াও গোপনে নফল পড়ার ফজিলত অনেক বেশি। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘জনসম্মুখের তুলনায় লুকিয়ে নফল নামাজ পড়ার মধ্যে ২৫ গুণ বেশি সওয়াব।

নামাজের পাশাপাশি সর্বদা মানুষের উপকার করতে হবে এবং এতেও অনেক সোয়াবের অধিকারি হয়া যাবে। মানুষের উপকার করার ফজিলত : রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজনে কিছুক্ষণ সময় দেয়া আমার কাছে এক মাস মসজিদে ইতেকাফ করার চেয়েও বেশি পছন্দনীয়। (আল মু’জামুল কাবির : ১৩৬৪৬)

কেউ যদি কন আমল করার নিয়ত করে তবে আমলের নিয়তেও সওয়াব মেলে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি রাতে শয়নকালে এই নিয়ত করে যে, সে রাতে উঠে নামাজ পড়বে; কিন্তু প্রচণ্ড ঘুমের কারণে সকাল হয়ে যায়, তাহলে সে তার নিয়ত অনুযায়ী নামাজের সওয়াব পাবে। আর ঘুমটা আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য সদকাস্বরূপ হবে। (নাসায়ি : ১৭৮৭)

চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করার জরুরি কিছু বিধান




আজকাল চেয়ারে বসে নামাজ পড়ার প্রবণতা খুব বেশি দেখা যাচ্ছে। কিছু লোক আরামের জন্য চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করে। কিন্তু শুধু আরামের জন্য বা মামুলি কষ্টের বাহানায় চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করা জায়েয নাই। এমন ব্যক্তির পক্ষে অবশ্যই দাঁড়িয়ে যথা নিয়মে নামাজ আদায় করা ফরজ। যে ব্যক্তি জমিনের উপর বসে নামাজ আদায় করতে সক্ষম তার জন্য শুধু এই বাহানায় চেয়ারে বসে নামাজ পড়া যাবে না যে সে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে বা রুকু-সিজদা করতে অক্ষম। বরং শরীয়ত এমন ব্যক্তিকে বসে নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছে। শুধু ঐ ব্যক্তি চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করবে যে জমিনে বসেও নামাজ পড়তে অক্ষম। এক্ষেত্রে অবশ্যই জানতে হবে-

১. যে ব্যক্তি মাজুর নয়, অর্থাৎ দাঁড়াতে পারে এবং রুকু-সিজদা করতে সক্ষম এমন ব্যক্তির জন্য চেয়ারে বসে নামাজ পড়া জায়েয নেই। এই ব্যক্তি চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করলে তা আদায় হবে না।

২. এমন ব্যক্তি যে স্বাভাবিকভাবে রুকু-সিজদা করতে অক্ষম, কিন্তু জমিনের উপর বসে ইশারায় নামাজ আদায় করতে পারে তার জন্য চেয়ারে বসে নামাজ পড়া মাকরুহ। এমন ব্যক্তি জমিনে বসে ইশারার মাধ্যমে রুকু-সিজদা করবে।

৩. যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে সক্ষম, তবে রুকু-সিজদা করতে পারে না। অবশ্য জমিনে বসে ইশারায় নামাজ পড়তে পারে এমন ব্যক্তির জন্যও চেয়ারে বসে নামাজ পড়া মাকরুহ। এই ব্যক্তি তার সামর্থ অনুযায়ী দাঁড়িয়ে নামাজ শুরু করবে এরপর বাকি নামাজ বসে আদায় করবে।

৪. এমন ব্যক্তি যে জমিনের উপর বসে নামাজ পড়তে অক্ষম, অর্থাৎ সে মোটেও জমিনে বসে নামাজ আদায় করতে পারে না, শুধু এমন ব্যক্তির জন্য শরীয়ত চেয়ারে বসে নামাজ পড়ার অনুমতি প্রদান করেছে। তবে এমন ব্যক্তি চেয়ারে বসে শুধু ইশারার মাধ্যমে নামাজ আদায় করবে; সামনে কোনো টেবিল বা উঁচু তক্তা রেখে সেখানে রুকু-সিজদা করবে না।

নামাজ আদায় করতে হয় বিনয়ের সাথে, বিগলিত চিত্তে। যা দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া অথবা ওজরের সময় বসে নামাজ পড়ার মধ্যে পাওয়া যায়। সুতরাং মসজিদগুলোতে ঢালাওভাবে চেয়ারে বসে নামাজ পড়ার সংস্কৃতি পরিত্যাগ করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সহিভাবে দ্বীনকে জানার ও তদানুযায়ী আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

ফয়জুল আল আমীন 
[ফয়জুল আল আমীন- ধ্রুপদী এক লেখক। পুরো নাম- সৈয়দ মুহম্মদ ফয়জুল আল আমীন। প্রবন্ধ-নিবন্ধ, কলাম, সাহিত্য সমালোচনা, গল্প, গবেষণা, কবিতা, ছড়াসহ সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় যার সুদীপ্ত বিচরণ। দেশের প্রথম শ্রেণির প্রায় সব দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক ও ছোটকাগজে নিয়মিত লিখছেন প্রায় ২০ বছর ধরে। ধর্মচর্চার ক্ষেত্রে তাঁর গুরু হলেন বাবা। আর সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে প্রকৃতি। ইসলাম ধর্মের নানা দিক ও বিষয় নিয়ে সুদীর্ঘ গবেষণা করেছেন ফয়জুল আল আমীন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় রিপোর্টার, ফিচার লেখক, সাব-এডিটর, সহযোগী সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। একাধিক প্রকাশনা সংস্থায় সিনিয়র লেখক, সম্পাদক ও আরঅ্যা-ডি’র প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বর্তমানে পাঠকপ্রিয় একটি সাপ্তাহিকে চিফ রিপোর্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।]

ওমর (রা.)-কে ৪টি ঐতিহাসিক প্রশ্ন করেছিলেন এক খিৃস্টান বাদশাহ




ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা.) কে এক খৃষ্টান বাদশাহ চারটি প্রশ্ন লিখে চিঠি পাঠিয়েছিলেন এবং আসমানী কিতাবের আলোকে প্রশ্নের উত্তর চেয়েছিলেন। সেই চিঠির ৪টি প্রশ্ন পরবর্তিতে ঐতিহাসিক প্রশ্ন হিসেবে সবার কাছে সমাদৃত হয়ে আছে।

১ম প্রশ্নঃ একই মায়ের পেট হতে দু’টি বাচ্চা একই দিনে একই সময় জন্ম গ্রহন করেছে এবং একই দিনে ইন্তেকাল করেছে তবে, তাদের একজন অপরজন থেকে ১০০ বছরের বড় ছিলো। তারা দুইজন কে? কিভাবে তা হয়েছে?

২য় প্রশ্নঃ পৃথিবীর কোন্ স্থানে সূর্যের আলো শুধুমাত্র একবার পড়েছে। কেয়ামত পর্যন্ত আর কখনো সূর্যের আলো সেখানে পড়বে না?

৩য় প্রশ্নঃ সে কয়েদী কে, যার কয়েদ খানায় শ্বাস নেওয়ার অনুমতি নেই আর সে শ্বাস নেওয়া ছাড়াই জীবিত থাকে?
৪র্থ প্রশ্নঃ  সেটি কোন কবর, যার বাসিন্দা জীবিত ছিল এবং কবরও জীবিত ছিল, আর সে কবর তার বাসিন্দাকে নিয়ে ঘোরাফেরা করেছে এবং কবর থেকে তার বাসিন্দাজীবিত বের হয়ে দীর্ঘকাল পৃথিবীতে জীবিত ছিল?
হযরত ওমর (রাঃ) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) কে ডাকলেন এবং উত্তরগুলো লিখে দিতে বললেন।

১ম উত্তরঃ দুই ভাই ছিলেন হযরত ওযায়ের (আঃ) এবং ওযায়েয (আঃ) তারা একই দিনে জন্ম এবং একই দিনে ইন্তেকাল করা সত্বেও ওযায়েয (আঃ) ওযায়ের (আঃ) থেকে ১০০ বছরের বড় হওয়ার কারন হল, মানুষকে আল্লাহ তায়ালা মৃত্যুর পর আবার কিভাবে জীবিত করবেন? হযরত ওযায়ের (আঃ) তা দেখতে চেয়ে ছিলেন। ফলে, আল্লাহ তাকে ১০০ বছর যাবত মৃত্যু অবস্থায় রাখেন এরপর তাঁকে
জীবিত করেন। যার কারনে দুই ভাইয়ের বয়সের মাঝে ১০০ বছর ব্যবধান হয়ে যায়।

২য় উত্তরঃ হযর মুসা (আঃ) এর মু’জিযার কারনে বাহরে কুলযুম তথা লোহিত সাগরের উপর রাস্তা হয়ে যায় আর সেখানে সূর্যের আলো পৃথিবীর ইতিহাসে একবার পড়েছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত আর পড়বে না।

৩য় উত্তরঃ যে কয়েদী শ্বাস নেওয়া ছাড়া জীবিত থাকে, সে কয়েদী হল মায়ের পেটের বাচ্চা, যে নিজ মায়ের পেটে কয়েদ (বন্দী) থাকে।

৪র্থ উত্তরঃ  যে কবরের বাসিন্দা জীবিত এবং কবরও জীবিত ছিলো, সে কবরের বাসিন্দা হলেন, হযরত ইউনুস (আঃ) আর কবর হল, ইউনুস (আঃ) যে মাছের পেটে ছিলেন- সে মাছ। আর মাছটি, ইউনুস (আঃ) কে নিয়ে ঘোরাফেরা করেছে। মাছের পেট থেকে বের হয়ে আসার পর, ইউনুস (আঃ) অনেক দিন জীবিত ছিলেন। এরপর ইন্তেকাল করেন।

Friday 13 May 2016

বিপদের সময় নবীজির শেখানো ৩টি দোয়া


দুুনিয়ায় মানুষের বিপদের শেষ নেই। কাজে কর্মে কমবেশি বিপদ চলেই আসে সব সময়। মসিবত ও পেরেশানিতে পড়ে সঠিক জ্ঞান হারায় মানুষ। এসব থেকে মুক্তি লাভের উপায় হিসেবে নবীজি সা. উম্মতকে বিভিন্ন দোয়া শিখিয়েছেন। বিপদের সময়ের এ দোয়াগুলো শিখে রাখুন যাতে বিপদ থেকে উদ্ধার হতে পারেন।

সাদ ইবনে আবি ওক্কাস রা. বলেন, নবীজি সা. দুঃখ-কষ্টের সময় বলতেন : লা-ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন।

অর্থ : একমাত্র তুমি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিশ্চয়ই আমি সীমালঙ্ঘনকারী। (তিরমিজি : ৩৫০০)

এ দোয়াটি কোরআনের বর্ণিত এবং দোয়াটি দোয়ায়ে ইউনুস নামে প্রসিদ্ধ।

এ দোয়া যে যত বেশি পড়বে আল্লাহ তায়ালা তাকে বিপদ থেকে মুক্ত করবেন। আসমা বিনতে ওমাইর রা. থেকে বর্ণিত, নবীজি সা. বলেন, আমি কি তোমাদের এমন কিছু শিখিয়ে দেব না যা তুমি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানির মধ্যে পড়বে। সাহাবী বললেন, অবশ্যই শেখাবেন। নবীজি বললেন, দোয়াটি হচ্ছে : আল্লাহু আল্লাহ রব্বী লা উশরিকু বিহি শাইয়ান।

অর্থ : আল্লাহই আল্লাহ আমার প্রতিপালক। আমি তার সঙ্গে কোনো কিছু শরিক করি না। (আবু দাউদ : ১৫২৫) আনাস রা. থেকে বর্ণিত,

নবীজি সা. বলেন : আল্লাহুম্মা লা সাহলা ইল্লা মা জায়ালতাহু সাহলান, ওআনতা তাজআলুল হুযনা সাহলান ইযা শিইতা। অর্থ : ইয়া আল্লাহ, কোনো বিষয় সহজ নয়। হ্যাঁ, যাকে তুমি সহজ করে দাও। যখন তুমি চাও তখন তুমি মুশকিলকে সহজ করে দাও। (ইবনে হিব্বান : ৯৭৪)

নামাজের মধ্যে রাকায়াত সংখ্যা ভুলে গেলে যা করতে হয় ?



মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে থাকেন। কিন্তু অনেকেই আছেন যারা নামাজে অধিক মনোযোগ দেয়ার জন্য অনেক সময় রাকায়াত সংখ্যা মনে থাকে না। নামাজরত অবস্থায় যদি রাকায়াত সংখ্যা ভুলে যান তাহলে আপনি কী করবেন?

প্রথম রাকাত পড়লাম নাকি দ্বিতীয় রাকাত? মনের মধ্যে যদি এমন প্রশ্ন উদিত হয়, তাহলে মন যে দিকে ঝুঁকবে বা সায় দিবে তাই গ্রহণ করতে হবে। আর যদি কোনো দিকেই মন না ঝুঁকে তাহলে কম তথা এক রাকাত ধরতে হবে। তবে এই প্রথম রাকাতে বসে তাশাহহুদ পড়বে, কেননা হতে পারে প্রকৃতপক্ষে এটাই দ্বিতীয় রাকাত। দ্বিতীয় রাকাতেও বসে তাশাহহুদ পড়বে।

তৃতীয় রাকাতেও বসে তাশাহহুদ পড়বে, কেননা হতে পারে এটি চতুর্থ রাকাত। তারপর চতুর্থ রাকাতে সাজদায়ে সাহু করে নিবে। যদি সন্দেহ হয় যে, দ্বিতীয় রাকায়াত পড়লাম, নাকি তৃতীয় রাকাত? তাহলে তার হুকুমও এরূপ। যদি মন কোনো দিকে না ঝুকে তাহলে দ্বিতীয় রাকাত ধরে নিবে এবং এই রাকাতে বসে তাশাহহুদ পড়বে এবং এটা বিতর নামাজ হলে এ রাকাতেও দুয়ায়ে কুনুত পড়বে।


তৃতীয় রাকাতেও বসবে। তারপর চতুর্থ রাকাতে সিজদায়ে সাহু সহকারে নামাজ শেষ করবে। যদি সন্দেহ হয় যে, তৃতীয় রাকাত পড়লাম, নাকি চতুর্থ রাকাত? তাহলে তার হুকুম অনুরূপ। কোনো দিক মন না ঝুঁকলে তিন রাকাত ধরে নিবে। কিন্তু এই তৃতীয় রাকাতেও বসে তাশাহুদ পড়তে হবে। তারপর চতুর্থ রাকাতে সিজদায়ে সাহু সহকারে নামাজ শেষ করবে।

যদি নামাজ শেষ করার পর সন্দেহ হয় যে, এক রাকাত কম রয়ে গেলে কিনা? তাহলে এই সন্দেহের কোনো মূল্য নেই। নামাজ হয়ে গেছে। অবশ্য যদি সঠিকভাবে স্মরণ আসে যে, এক রাকাত কম রয়ে গেছে, তাহলে দাঁড়িয়ে আরও এক রাকাত পড়ে নিবে এবং সিজদায়ে সাহু সহকারে নামাজ শেষ করবে।

কিন্তু যদি ইতোমধ্যে এমন কোনো কাজ করে থাকে যাতে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যায় (যেমন কেবলা থেকে ঘুরে বসে থাকা বা কথা বলে থাকা) তাহলে নতুন নিয়ত বেঁধে সম্পূর্ণ নামাজ পুনরায় পড়তে হবে। আর প্রথম অবস্থায়ও নতুনভাবে নামাজ পুনরায় পড়ে নেয়া উত্তম; জরুরি নয়। শেষ কথা, উপরোক্ত কোন ব্যাখ্যা যদি আপনার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে না হয়, তাহলে আপনি নামাজ ভেঙে পুনরায় নিয়্যত করে নামাজ আদায় করবেন।

Thursday 5 May 2016

নির্বাচন ও ভোট : ইসলামী দৃষ্টিকোণ



মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয়েছে। ডিসেম্বরের শেষের দিকে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। দু’বছর রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দেশ পরিচালিত হওয়ার পর জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে আবার তা পরিচালনা করবে নির্বাচিত সরকার। ১৯৯১ সনে আমাদের দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হয়েছে। গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় নির্বাচন একটি অপরিহার্য  বিষয়। রাষ্ট্রে্র নাগরিকগণ ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে বাছাই করার সুযোগ পায়। নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে। প্রচলিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দল ও প্রার্থীদের জন্য ভোট হচ্ছে ক্ষমতায় যাওয়ার মোক্ষম হাতিয়ার। ভিআইপি মর্যাদা হাসিল করা, আধিপত্য অর্জন করা, জনগণকে শোষণ করার একটি মাধ্যম হিসাবে বিবেচনা  করা হয় নির্বাচনকে। আর অনেক ভোটারের দৃষ্টিতেই ভোটের গুরুত্ব থাকে খুবই সামান্য। এলাকার উন্নয়ন কাজ-কর্ম যার দ্বারা বেশি হবে বলে মনে করে সাধারণত তাকেই মানুষ ভোট দিয়ে থাকে। এমনকি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও রাস্তা-ঘাট ও ব্রীজ ইত্যাদি বিষয়ও মুখ্য হয়ে উঠে। অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে এ ভোটের গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামে কাউকে ভোট দেওয়ার অর্থ খুবই ব্যাপক এবং সুদূর প্রসারী।

সে আলোচনার আগে প্রচলিত গণতান্ত্রিক সমাজের নির্বাচন পরিস্থিতির দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক। বর্তমানে প্রায় সকল দেশেই ভোট হচ্ছে আধিপত্যকামী, পুঁজিপতি, বংশগত রাজনীতিক, গডফাদার ও ক্ষমতালোভীদের  একটি খেলা। এটি এমন একটি খেলা, যেখানে প্রতারণা ও মিথ্যা  হচ্ছে বড় উপাদান।

 যেমন :   

পারিবারিক রাজনীতি, অন্যকে গালমন্দ করা, গীবত-শেকায়েত করা, নিজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হওয়া, নেতা-নেত্রীর অন্ধ আনুগত্য, একে-অন্যের কোনো ভালই স্বীকার করতে না চাওয়া, নিজের অবাস্তব ও মিথ্যা অবদানের প্রচারণা, মিথ্যা অপবাদ-মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, শুধুমাত্র ক্ষমতার লোভে আদর্শিক কোনো মিল না থাকা সত্ত্বেও জোটবদ্ধ হওয়া ও আদর্শিক শত্রুকেও জোটে নেওয়া, মনোনয়ন না পেলে রাতারাতি এত দিনের শত্রুকে বন্ধু বানিয়ে দলবদল করা, মনোনয়ন বাণিজ্য, অর্থ, পদবী ও রাষ্ট্রীয় সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে ভোট কেনা-বেচা এবং ভোটের পর হর্সট্রেডিং ইত্যাদি বিষয় যে প্রচলিত গণতন্ত্রের সমার্থক তা সম্ভবত ব্যাখ্যা করে বুঝানোর প্রয়োজন নেই। অবশ্য  এত কিছুর পরে ভোট পেলেও আমাদের মতো দেশে ক্ষমতায় যাওয়া বা ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি সম্পূর্ণই নির্ভর করে বিদেশী প্রভূদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর। বেশি ভোট পাওয়া দল যদি তাদের অপছন্দের হয় তবে যে কোনো সামান্য অজুহাতেই সে দলকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখা বা নামিয়ে দেওয়া অনেকটা সুনিশ্চিত।  

প্রিয় পাঠক! এটাই গণতন্ত্রের একটি সামান্য খোলামেলা পরিচয়। এই গণতন্ত্রই হয়ে গেছে এত গুরুত্বপূর্ণ যে, তা যেন ঈমান-আকীদার মতো অপরিহার্য এবং এর যেন কোনো বিকল্প নেই। গণতন্ত্র নিয়ে অনেক কিছুই বলার মতো আছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে গণতন্ত্রের বিশ্লেষণ এবং ইসলামের খেলাফত ও শুরাপদ্ধতির বৈশিষ্ট্য এবং এ দু’টির তুলনামূলক উপস্থাপনের বিষয়টি অন্যদিনের জন্য থাক। আজ সংক্ষেপে শুধু এতটুকু বলা জরুরি মনে হচ্ছে যে, প্রচলিত গণতন্ত্র ও ইসলামের খেলাফত পদ্ধতি মৌলিক নীতিমালা ও আদর্শ-উদ্দেশ্যের দিক থেকে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী দু’টি ব্যবস্থা। ইসলামী শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতা কখনও মুখ্য উদ্দেশ্য নয়, আর ক্ষমতাশীলদের যাচ্ছেতাই করার কোনোই সুযোগ নেই। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে মনগড়া যে কোনো আইন তৈরি করা, বিরোধীদের দমন-পীড়ন, জনগণকে নিজেদের গোলামের মতো ভেবে যে কোনো আইন অথবা করের বোঝা তাদের ঘাড়ের উপর চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ ইসলামে নেই।

অন্যদিকে বর্তমান পদ্ধতির মতো চিহ্নিত সন্ত্রাসী, গডফাদার, দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠনকারী, মিথ্যাবাদী, ধর্মের প্রতি উদাসীন, খোদাদ্রোহী ব্যক্তিদের প্রার্থী হওয়া বা ক্ষমতায় বসার কোনো সুযোগ ইসলামে নেই। যদিও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভালো লোকদের প্রার্থী হওয়া বা নির্বাচিত হওয়ার আইনগত বাধা নেই, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সম্পূর্ণ ভিন্ন। হাতে গোনা সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বর্তমানে নির্বাচন হচ্ছে টাকার বিনিময়ে আধিপত্য ও প্রভাব-প্রতিপত্তির খেলা। সুতরাং এ ব্যবস্থায় যে শান্তি বা কল্যাণের আশা করা যায় না এবং এ পদ্ধতিতে সৎ, যোগ্য, নিষ্ঠাবান লোকজনের সরকার গঠিত হওয়া যে অনেকটা অসম্ভব তা বুঝিয়ে বলার দরকার আছে বলে মনে হয় না। তবুও পশ্চিমা গণতন্ত্র ও নির্বাচনই বর্তমানে আমাদের কাছে তিক্ত বাস্তবতা। ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় আমরা এখন সে পদ্ধতির অনুসারী। আমাদের গুনাহ-অপকর্ম, দ্বীন-শরীয়তের প্রতি উদাসীনতা, সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় জ্ঞানের অনুপস্থিতি এবং তাদের কাছে দ্বীন পৌঁছে দেওয়া ও সহীহ মানসিকতা তৈরি করার ব্যাপারে আমাদের আলেমসমাজ ও ধর্মীয় ব্যক্তিদের ব্যর্থতা আমাদেরকে এ অধঃপতনে নামিয়েছে। যে পর্যন্ত সাধারণ লোকজনের একটি বিশাল অংশকে দ্বীনি শিক্ষা ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ করে তাদের মধ্যে ইতিবাচক মানসিকতার সৃষ্টি না করা যাবে এবং চিন্তা ও বুদ্ধি বিকাশের মাধ্যমে গণজারণ ও বিপ্লবের সূচনা না করা যাবে সে পর্যন্ত আমাদেরকে গণতন্ত্রের এই তেতো শরবত পান করেই যেতে হবে। সুতরাং আসন্ন নির্বাচনের দিন ভোট দেওয়ার আগে ইসলামের দৃষ্টিতে এর গুরুত্ব ও হাকীকত জেনে নেওয়া দরকার।

ভোট কী?
হযরত মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ. এ সংক্রান্ত একটি পুস্তিকায় লিখেছেন যে,ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট হচ্ছে তিনটি বিষয়ের সমষ্টি। ১. সাক্ষ্য প্রদান ২. সুপারিশ ও ৩. প্রতিনিধিত্বের অথরিটি প্রদান।
কুরআন-সুন্নাহ সম্পর্কে ওয়াকিফহাল সকলেরই জানা রয়েছে যে, শরীয়তে উপরোক্ত তিনটি বিষয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ, কোনো ব্যক্তিকে রাষ্ট্রীয় নীতিমালা তৈরির এবং রাষ্ট্র্পরিচালনার জন্য প্রতিনিধিত্বের সনদ দেওয়ার মানে হচ্ছে প্রতিনিধিত্ব দানকারী (ভোটার) তার ভবিষ্যত সকল কার্যকলাপের দায়িত্ব নিজ কাঁধে নিচ্ছে। এমনিভাবে সুপারিশের বিষয়টিও       প্রনিধানযোগ্য। কুরআনুল কারীমের ভাষায় ‘যে ভালো সুপারিশ করবে সে তার নেকীর ভাগী হবে। আর যে মন্দ সুপারিশ করবে সেও মন্দের হিস্যা পাবে।’ -সূরা নিসা, আয়াত ৮৫

ভোট ও সাক্ষ্য

ভোটের মধ্যে যে তিনটি (সাক্ষ্য প্রদান, সুপারিশ, প্রতিনিধিত্বের সনদপ্রদান) বিষয় রয়েছে এর মধ্যে ‘শাহাদত’ বা সাক্ষ্যের বিষয়টি মৌলিক। অর্থাৎ কাউকে ভোট দেওয়ার অর্থ হল, তার ব্যাপারে এ সাক্ষ্য প্রদান করা যে, লোকটি ভালো এবং যোগ্য। এখন যদি যথাযথ জায়গায় সীল দিয়ে এ সাক্ষ্য প্রদান করা হয় তবে সে হবে সত্য সাক্ষী অন্যথায় হবে মিথ্যা সাক্ষী। আর মিথ্যা সাক্ষ্য যে কত বড় কবীরা গুনাহ ও হারাম কাজ তা কি কারো অজানা রয়েছে? অবশ্য বর্তমান বে-দ্বীনি ও বস্ত্তবাদিতার যুগে অনেকের কাছেই মিথ্যা কোনো বিষয়ই নয়। কথায়, লিখায়, ক্ষমতায়, আদালতে, বই-মিডিয়ায়, বক্তৃতা-ভাষণে সব জায়গাতেই মিথ্যার সয়লাব। অথচ মানবতার মুক্তির দূত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঠিন ভাষায় মিথ্যা ও মিথ্যা সাক্ষ্যের নিন্দা করেছেন। সহীহ বুখারীর একটি বর্ণনায় হযরত আবু বকর রা. বলেন যে, রাসূলুল্লাহ একদা এক জায়গায় হেলান দিয়ে বসা অবস্থায় তিন তিনবার সাহাবীদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কি তোমাদেরকে কবীরা গুনাহগুলোর মধ্যে বড় কবীরা গুনাহের কথা বলব? সাহাবীগণ হ্যাঁ সূচক উত্তর দেওয়ার পর তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা, পিতা-মাতার অবাধ্যতা (এ দুটি কথা বলার পর তিনি সোজা হয়ে বসলেন) এবং বললেন, শুনে নাও! মিথ্যা সাক্ষ্য অনেক বড় কবীরা গুনাহ।
সুনানে তিরমিযীর একটি হাদীসে মিথ্যা সাক্ষ্যকে শিরকের সমান অপরাধ বলা হয়েছে।  সু-বিখ্যাত হাদীস বিশারদ শামসুদ্দীন যাহাবী রাহ. মিথ্যা সাক্ষ্যকে চারটি বড় গুনাহের সমষ্টি বলে আখ্যা দিয়েছেন। সেগুলো হচ্ছে : নিজে মিথ্যা ও অপবাদ আরোপ করছে ২) যার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিচ্ছে তার উপর যুলুম করছে ৩) যার পক্ষে মিথ্যা সাক্ষ্য দিচ্ছে তার উপরও প্রকৃতপক্ষে যুলুম করছে কারণ, সে যা কিছু পাওয়ার যোগ্য ছিল না এ ব্যক্তি মিথ্যা সাÿÿ্যর মাধ্যমে তাকে এর অধিকারী করে তুলছে এবং এভাবে তাকে করছে জাহান্নামী ৪) মিথ্যা সাক্ষ্যদাতার একটি হালাল কাজকে হারাম বানিয়ে নেওয়া।

মিথ্যা ও অবাস্তব সাক্ষ্যের ক্ষতি ও খেসারত বলে শেষ করার মতো নয়। হকদার অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া, অযোগ্য ও অপদার্থের উত্থান, দুর্নীতিবাজ ও শোষকশ্রেণীর লোকদের ক্ষমতায়ন- এসবই মিথ্যা সাক্ষ্যের ক্ষতি। এর কারণে ইনসাফপছন্দ এবং যোগ্য ও সৎ-আমানতদার ব্যক্তিগণ নিরবতা পালন করে রাষ্ট্র ও জনগণের খেদমত থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখতে বাধ্য হন।

ভোট অবশ্যই দিতে হবে
উপরোক্ত আলোচনা পড়ে প্রশ্ন আসতে পারে যে, তা হলে তো বর্তমান সমাজে অধিকাংশ আসনের লোকদের ভোট দেওয়াই সম্ভব হবে না। কারণ, এমন লোক তো পাওয়া যাবে না, যার সপক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করা যায় এবং এ কারণে অনেকে ভোট দেওয়া থেকে বিরতও থাকেন, এমনকি বহু লোক ভোটার হতেও আগ্রহী হন না। সাধারণ বিবেচনায় এ চিন্তা যুক্তিযুক্ত মনে হলেও এক্ষেত্রে কিন্তু মুদ্রার ভিন্ন পিঠও রয়েছে। তা হচ্ছে, মন্দের ভালো বা তুলনামূলক কম ক্ষতিকে বেছে নেওয়া এবং অধিক ক্ষতি থেকে বাঁচার চেষ্টা করা। বর্তমানে ভোটকে এ দৃষ্টিকোণ থেকেই বিবেচনায় আনতে হবে এবং ভোটের মাধ্যমে অধিক ÿতি থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে হবে। কোনো আসনে একজন লোককেও যদি সাক্ষ্য ও ভোট দেওয়ার উপযুক্ত মনে না হয় তবে তাদের মধ্যে যে জন নীতি-নৈতিকতা, চিন্তা-চেতনা ও কাজে-কর্মে অন্য প্রার্থীর তুলনায় কম খারাপ তাকেই ভোট দিতে হবে। কারো ব্যাপারে যদি খোদাদ্রোহিতা, ইসলাম-দুশমনী, রাষ্ট্র্ ও জনগণের স্বার্থ-বিরোধী হওয়ার সুস্পষ্ট আলামত থাকে তবে ঐ অসৎ ব্যক্তির বিজয় ঠেকানোর চেষ্টা করতে হবে ভোটারাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে।

মোটকথা, গণতন্ত্র ও বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতির যতই ত্রুটি থাকুক এর কারণে ভোট দানে বিরত থাকা সমীচীন হবে না; বরং বুদ্ধি-বিবেচনা খরচ করে, ভেবে-চিন্তে ভোটারাধিকার প্রয়োগ করতে হবে ভাল-মন্দের ভালো অথবা অন্তত কম মন্দের পক্ষে। এ ক্ষেত্রে শরীয়তের দৃষ্টিতে কাউকে ভোটদানের অর্থ হবে, এ সাক্ষ্য দেওয়া যে, লোকটি তার প্রতিদ্বন্দ্বিদের তুলনায় কিছুটা হলেও ভালো। 

অবিবাহিত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে মহানবী (সা.)

বিয়ে


আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) অসংখ্য হাদিসে অবিবাহিতদের বিয়ের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। এসকল হাদিস দৃষ্টে সহজে প্রতীয়মান হয় যে, ইসলাম বিয়ের প্রতি কতোটা গুরুত্বারোপ করেছে।

যেনো যৌন তাড়না নিয়ন্ত্রিত থাকে, বংশ বিস্তার অব্যাহত থাকে; চরিত্রসম্পদ থাকে সুসংহত। কেননা চারিত্রিক পবিত্রতার একমাত্র মাধ্যম বিয়েশাদি। একবার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যার স্ত্রী নেই সে ফকির। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, তার ধনসম্পদ থাকলেও?। জবাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ধনসম্পদ থাকলেও সে ফকির। তিনি আরো বলেন, সে মহিলা ফকির যার স্বামী নেই।

সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তার ধন-সম্পদ থাকলেও? জবাবে রাসুল সা. বলেন, হ্যাঁ, ধন-সম্পদ থাকলেও। [জামউল ফাওয়ায়িদ] এমন অসংখ্য হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিয়ের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন।

এসকল হাদিস দৃষ্টে সহজে প্রতীয়মান হয় যে, ইসলাম বিয়ের প্রতি কতোটা গুরুত্বারোপ করেছে। যেনো যৌন তাড়না নিয়ন্ত্রিত থাকে, বংশ বিস্তার অব্যাহত থাকে; চরিত্রসম্পদ থাকে সুসংহত।

কেননা চারিত্রিক পবিত্রতার একমাত্র মাধ্যম বিয়েশাদি। হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী তাঁর বিখ্যাত কিতাব ফতহুল বারিতে লেখেন, ويتزوج لكسر الشهوة و اعفاف النفس و تكثير النسل বিয়ে করা হয় যৌন তাড়না নিবারণের জন্য, যাতে নিজেকে পূত-পবিত্র রাখা যায়। সাথে বংশ রক্ষা হয় এবং সন্তান বৃদ্ধি পায়। [ফাতহুল বারী]
 
কপিরাইট ©২০১৬ Health And Wellness Related Portal
Distributed By : মোহাম্মদ নাবিল . Powered by: প্লাস আইটি