Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মনোহারিণী সর্পসুন্দরীদের গল্প

‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’ বলে একটি কথা আছে। অনেক ভয়ঙ্কর বস্তুরই অসাধারণ সৌন্দর্য থাকে। আপাতদৃষ্টিতে যা মানুষকে দূরে ঠেলে বা আতঙ্কিত করে, ভালো করে লক্ষ্য করলে প্রায়ই সেই জিনিসের প্রেমে পড়ে মানুষ। বিষধর সাপ মানুষের কাছে এমনই ভয়ঙ্কর প্রাণীগুলোর একটি। তাই বলে কি সাপ শুধু বিষধর ভয়ঙ্কর মৃত্যদূতই হয়? নাকি সাপও কখনো কখনো হতে পারে দারুণ সুন্দর আর মনোহর? পৃথিবীতে এমন সুন্দর সাপ আছে যার দেহে রামধনুর সাত রঙ খেলা করে; তাদের কারো গড়ন, কারোবা শরীরের অপরূপ নকশা সৃষ্টির অপার লীলাই যেন ঘোষণা করে। সাপের সচরাচর বিষধর আর ভীতিকর রূপের বাইরে আজ পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সাপগুলোর কথা শোনা যাক।

শুরুতেই যে সাপের কথা বলবো তাকে সবুজ গাছের ডাল ও পাতার মাঝে খুঁজে পাওয়ায় বড়ো দুষ্কর। প্রায় ৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা, সবুজ এই সাপ নিউ গিনি, ইন্দোনেশিয়া আর অস্ট্রেলিয়াতেই প্রধানত দেখা যায়। এর নাম মনে হয় সেজন্যই গাছের সবুজ পাইথন বা গ্রিন ট্রি পাইথন। পাতার মতো গাঢ় সবুজ রঙে সাপটির মাথা থেকে লেজ সম্পূর্ণ মোড়ানো, আর গাছের ডালে, পাতার ফাঁকে, ঝোপঝাড়ে, এমনকি সবুজ গুল্মের সাথেও সহজেই মিশে যেতে পারে সে। তবে পোষা প্রাণী হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয় আর চড়া দামের কারণে চমৎকার সবুজ এই পাইথনের অস্তিত্ব এখন সংকটাপন্ন।

গ্রিন ট্রি পাইথন; source: pinsdaddy.com

দক্ষিণ আমেরিকা আর আফ্রিকাতে একইরকম দেখতে এক সবুজ অজগর পাওয়া যায়। দুই সাপের গায়েই সাদা ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়। একইভাবে গাছের ডালে জড়িয়ে মাথাটা মাঝে রেখে ঘুমায় বলে অনেকে এদের একই জাত ভাবলেও এরা কিন্তু বেশ আলাদা। তবে সবুজ অজগরের সামনের দাঁত বেশ বড় হয় শিকার ধরার জন্য।

আলবিনো বল পাইথন; source: pinterest.com

গাঢ় রঙের প্রভাবে অসাধারণ রূপের অধিকারী সাপের কথা বলতে গেলে আলবিনো বল পাইথনের কথা বলতেই হয়। ৬-১৮ ফুট পর্যন্ত দীর্ঘ আর সারা দেহ হলুদের আধিপত্যে রাজকীয় আফ্রিকার পশ্চিমাঞ্চলের এই সাপ বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয়  পোষা প্রাণীদের একটি। এই সাপের দেহে হলুদের সাথে সাদার আধিপত্য থাকতে পারে, কিন্তু থাকে না কালো রঙের একটা ফোঁটাও। আর সেই সাথে লাল চোখ দুটো যেন এর অসাধারণত্ব আরো একধাপ বাড়িয়ে তোলে।

ব্লিজার্ড কর্ন স্নেক; source: pinterest.com

আফ্রিকা ও আমেরিকার শষ্যের সাপগুলোর মধ্যেও কিন্তু বৈচিত্রের অভাব নেই। শষ্যের রক্তাভ সাপ দেখা যায় উত্তর আমেরিকার ক্ষেতখামার ও পুরোনো, পরিত্যক্ত বাড়ি বা ঘন বনের প্রান্তের দিকে। শষ্যের মজুদের কাছাকাছি এই সাপ প্রায়ই দেখা যায় বলে একে সাধারণত শষ্যের সাপ বলা হয়। পৃষ্ঠের দিকে এর রঙ রক্তের মতো লাল আর বুকের দিকে অনেকাংশে বাদামী, চোখ দুটো কিন্তু বেশ কালো। এককথায়, এটি বেশ মনোহারী।

শষ্যের সাপগুলোর মধ্য আরেকটি হলো শষ্যের তুষার সাপ বা ব্লিজার্ড কর্ন স্নেক। পরিণত এই সাপের রঙ হয় তুষারের মতো সাদা। বিষ না থাকায় এই সাপ একদম ক্ষতিবিহীন একটা প্রাণী। তাই অনেক বাড়িতেই এটি পোষা প্রাণী হিসেবে স্থান পায়।

ইস্টার্ন কোরাল স্নেক; source: yandex.ru

এবার বলি সেই সাপগুলোর কথা যার সৃষ্টিশৈলী যেন হরেক রঙ আর নকশার এক মেলবন্ধন। পূর্বের প্রবাল সাপ বা ইস্টার্ন কোরাল স্নেকের দেহ যেন জ্যামিতিক খাঁজে রঙের খেলা। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সাপগুলোর মধ্যে একটি হলেও এটা কিন্তু ভালোই বিষধর। আমেরিকার দক্ষিণ-পূর্ব দিকের মরুভূমি ও জলাভূমি অঞ্চলে এই সাপ বেশি দেখা যায়। লুকিয়ে থাকতেই বেশি পছন্দ করে এই সাপ। তাই বছরে ১৫-২০ বারের বেশি এর কামড়ানোর খবর পাওয়া যায় না। তবে কামড়ালে একটু বিপদ বৈ কি! সহজে এর বিষের জন্য কার্যকর ওষুধ পাওয়া যায় না। আর কয়েক ঘন্টার মধ্যে শরীর অবশ হতে শুরু করে। আসলেই রূপ ও বিষ দুটোই মারাত্মক এই প্রাণীর।

ব্রাজিলের এক অজগর আছে, নাম তার ব্রাজিলীয় রামধনু অজগর। ৫-৭ ফুট লম্বা এই সাপের সারা শরীর বাদামী, কমলা, এমনকি কখনো কখনো বেশ উজ্জ্বল লালের পূর্ণ চন্দ্রের মতো বৃত্ততে আঁকা। রঙের খেলায় এখানে পাশাপাশি বিপরীত রঙগুলো অবস্থান করে। কালো আর হালকা নীলের উপস্থিতিও মুগ্ধ করার মতো। প্রায় ২০ বছর বা তার বেশি সময়কাল ধরে বেঁচে থাকা এই সাপের দেখা পাওয়া যায় মূলত মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, সমস্ত ব্রাজিল ও আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলের নদীনালা, খালবিল ও নর্দমাতে। সাপের শরীরে রামধনুর খেলা বোধহয় একেই বলে!

ব্লু রেসার স্নেক; source: soha.vn

মানুষ যার অপছন্দের তালিকার শীর্ষে, এমন এক রূপসী থাকে আমেরিকার পূর্ব অঞ্চলে, বিশেষ করে রকি পর্বত সংলগ্ন বিভিন্ন পার্বত্য এলাকায়। এই সাপের নাম ব্লু রেসার স্নেক বা নীল দৌড়বিদ সাপ, পূর্বের দৌড়বিদ নামেও বেশ পরিচিত সে। নাম শুনেই পাঠক বুঝবেন, এই সাপ বেশ ছটফটে আর খুব দ্রুত চলাচল করে। মানুষ পছন্দ করে না বলেই কম জনবসতিপূর্ণ এলাকায় বেশ দলবেঁধে থাকতে দেখা যায় এদের। বাচ্চা এই সাপের রঙ বাদামী ধরনের হলেও প্রাপ্তবয়স্ক সাপ হালকা নীল রঙের হয়, সাথে কোথাও কোথাও সাজানো কালো ছোপ ছোপ থাকতে পারে। ঝোপঝাড়, বন, জলাভূমি, গাছের ডালে বা শ্যাওলা ভরা পুকুরেও পাওয়া যায় এই নীলাভ সুন্দরীকে। অনেক সময় এদের বাসস্থান আশেপাশের প্রায় ২৫ একর জায়গা জুড়ে থাকে। তবে কম জায়গাতেই দলবেঁধে থাকা এদের সচরাচর স্বভাব।

ইস্টার্ন র‍্যাট স্নেক; source: twitter.com

প্রবাল অঞ্চলের আরেকটি জমকালো সুন্দর সাপ হলো ইস্টার্ন র‍্যাট স্নেক। কালো আর নীলের সংমিশ্রণ যেন এর দেহে বেগুনী ভাবটাই ফুটিয়ে তোলে। পেটানো মাংসল দেহ আর চোখা লেজের এই সাপ প্রায় ৮ ফুট লম্বা হয়। ছটফটে আর ভীতু এই সাপের বাসভূমি ফ্লোরিডা ও জর্জিয়ার পূর্বের প্রবাল সমতল এলাকাগুলো। বিষধর এই সাপ কিন্তু অন্যান্য অনেক সাপকেই খেয়ে ফেলতে পারে। খালি চোখে কালো মনে হলেও আলোতে এর দেহের নীল ভাব বেশ ফুটে ওঠে। কালো সাপগুলোর মধ্যে আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলের ভয়ঙ্কর বিষধর কালো কোবরাও কিন্তু বেশ রূপবতী।

রেড হেড ক্রাইট; source: youtube.com

শেষ করি আরেকটি অত্যন্ত রূপবতী আর মারাত্মক বিষধর সাপের কথা বলে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই সাপের নাম লাল মাথাওয়ালা ক্রাইট। বিশেষ করে থাইল্যান্ডের দক্ষিণে এই সাপ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৪০০ মিটার ওপরে বন-জঙ্গলে পরিপূর্ণ পাহাড়ি অঞ্চল আবাসস্থল। পূর্ণবয়স্ক একটি লাল মাথার ক্রাইট প্রায় ৬.৯-৭ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এর সারা দেহ বৈচিত্রময় দুই ধরনের নীল রঙে মোড়ানো। পৃষ্ঠের দিকে লম্বালম্বিভাবে থাকে রাজকীয় গাঢ় নীল এবং তার পাশে হালকা নীলের ছোঁয়া। দেহের তলদেশের বর্ণ ম্লান হলেও মাথা আর সরু, ছোট লেজটা কিন্তু  সম্পূর্ণ উজ্জ্বল লাল-কমলার মিশ্রণ। অপরূপ রূপসী হলেও এর প্রাণঘাতী বিষই বলে দেয়, রূপই সব নয়, জীবন আগে। তাই মনে হয় মানুষের থেকে এই সাপের দূরত্ব বেশ ভালোই।

সাপ প্রাণী হিসেবে অনেকের কাছে বেশ ভীতিকর হলেও কেউই কিন্তু এই সাপগুলোর সৌন্দর্যকে এড়িয়ে যেতে পারবে না। বিষধর হোক বা না হোক- প্রকৃতি যে কত বিচিত্রভাবে সুন্দর হতে পারে তা এই চমৎকার প্রাণীগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায়।

ফিচার ইমেজ: pinsdaddy.com

Related Articles