সাঁড়াশি অভিযান: প্রথম দিনে আটক ‘সহস্রাধিক’

দেশজুড়ে পুলিশের ‘সাঁড়াশি অভিযান’ শুরুর পর প্রথম দিনে ‘সহস্রাধিক’ আটকের খবর এসেছে, যাদের মধ্যে জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামিরাও রয়েছেন।

লিটন হায়দারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 June 2016, 05:47 PM
Updated : 11 June 2016, 07:18 AM

এই অভিযানের মূল্য উদ্দেশ্য জঙ্গি দমন হলেও আটকদের মধ্যে মোট কতজন জঙ্গি সদস্য আছেন, সে তথ্য জানাতে পারেননি পুলিশ কর্মকর্তারা। জেলা পর্যায় থেকে যে তথ্য এসেছে, তাতে এই সংখ্যা অন্তত ৩।   

শুক্রবার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আটকদের মধ্যে ঠিক কতজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার দেখাবে- সে তথ্যও কর্মকর্তারা মধ্যরাত পর্যন্ত দিতে পারেননি।

এই অভিযান শুরুর বিষয়টি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জানানো হয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে। ২৪ ঘণ্টা পর সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে যোগাযোগ করেও আটক বা গ্রেপ্তারের নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের ডিআইজি (মিডিয়া) একেএম শহিদুর রহমান শুক্রবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা ২৪ ঘণ্টা সময় ধরে কাজ করছেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সদর দপ্তরে তথ্য আসছে। সেগুলো লিপিবদ্ধ হচ্ছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে।

“২৪ ঘণ্টায় কতজন গ্রেপ্তার হল- তা কমপাইল করে শনিবার সকাল ১০টার মধ্যে জানা সম্ভব হবে বলে আশা করছি,” বলেন তিনি।   

বিভিন্ন জেলা থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধিরা এবং ঢাকায় আমাদের প্রতিবেদকরা মহানগর পুলিশের কাছ থেকে দিনের বিভিন্ন সময়ের যে তথ্য জড়ো করেছেন, তাতে সন্ধ্যা পর্যন্ত আটকের সংখ্যা ছিল সাড়ে সাতশর মতো।

সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আটকের সংখ্যা বেড়েছে। তাদের মধ্যে যারা ‘নির্দোষ’, তাদের যাচাই বাছাইয়ের পর ছেড়ে দেওয়া হবে বলেও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। 

পুলিশ সদর দপ্তরের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, শুক্রবার সারাদেশে আটকের সংখ্যা ‘এক হাজারের বেশি’।

“তাদের মধ্যে থেকে যাচাই বাছাই হবে। রাতেও অভিযান চলবে, আটকের সংখ্যাও বাড়তে পারে। সংখ্যায় কমবেশি হতে পারে; শনিবার সকাল নাগাদ বলা যাবে।”

জেলা পুলিশের বরাত দিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধিরা জঙ্গিবিরোধী অভিযানের যে খবর দিয়েছেন, তাতে আটকদের মধ্যে তিনজন জেএমবি সদস্য বলে জেলা পুলিশের ভাষ্য।  

শেরপুর সদর থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মারুফ হাসান রনি নামের ২৫ বছর বয়সী ওই যুবককে তারা আটক করেন।

“তার বিরুদ্ধে জেএমবির কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ২০০৫ ও ২০১০ সালে করা দুটি মামলা রয়েছে।”

আর রাজশাহীর পুঠিয়ায় জেএমবির সন্দেহভাজন দুই সদস্যকে আটক করা হয়েছে বলে পুঠিয়া থানার ওসি হাফিজুর রহমান হাফিজ জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “উপজেলার জাগিরপাড়া এলাকার সিরাজুল ইসলাম ও জামিরা গ্রামের মন্টু জেএমবির সঙ্গে জড়িত। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাদের আটক করা হয়েছে।”

সারা দেশে আটক বাকিদের মধ্যে জামায়াত-শিবিরের ‘উল্লেখযোগ্য সংখ্যক’ নেতাকর্মী রয়েছে বলে স্থানীয় পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আরও অনেককে মাদকসেবী বা নিয়মিত মামলার আসামি বলা হচ্ছে।

অবশ্য পুলিশ কর্মকর্তারা যা বলছেন, তাতে এই বিশেষ অভিযানে আটকের সংখ্যাকে ‘খুব বেশি’ বলা যাবে না, কেননা সারাদেশে এমনিতেই প্রতিদিন গড়ে আট থেকে নয়শ লোককে আটক করা হয় বলে তাদের ভাষ্য।

কেবল ঢাকা মহানগরেই ২৪ ঘণ্টায় গড়ে দেড় শতাধিক লোককে গ্রেপ্তার করা হয় বলেও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। 

ঢাকা মহানগর পুলিশের নিউজ পোর্টাল ‘ডিএমপি নিউজ’ এর তথ্যে দেখা গেছে গত ৮ জুন সকাল  ৬টা থেকে ৯ জুন সকাল ৬টা পর্যন্ত পুলিশ ১৯৯ জনকে গ্রেপ্তার করে।

এর মধ্যে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হন ৩০জন। বাকিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত বা আগের কোনো মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল।

আর সাঁড়াশি অভিযান চলাকালে ঢাকা মহানগরে শুক্রবার রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত ১৭৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে উপ কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান।

তবে এদের মধ্যে কতজন জঙ্গি সদস্য রয়েছে, সে তথ্য তিনি জানাতে পারেননি। 

গত এক বছরে লেখক, প্রকাশক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের হত্যার পাশাপাশি বিদেশি, হিন্দু পুরোহিত, খ্রিস্টান যাজক, বৌদ্ধ ভিক্ষু আক্রান্ত হওয়ার পর সম্প্রতি চট্টগ্রামে একই কায়দায় খুন হন এক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী। তারপরই পুলিশের এই অভিযানের যোষণা আসে।

সরকারবিরোধী আন্দোলনে নাশকতার দিকে ইঙ্গিত করে এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করে আসছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।

ওই অভিযোগ ‘অমূলক নয়’ মন্তব্য করে  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার বলেন, “একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না, আমি হেড অফ দি গভার্নমেন্ট। আমার কাছে নিশ্চয়ই তথ্য আছে।”

এর পাল্টায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বৃহস্পতিবার দাবি করেন, আওয়ামী লীগ ও তার রাজনৈতিক মিত্ররাই এসব ঘটনায় জড়িত।

আর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই ‘সাঁড়াশি অভিযানের’ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, “গুপ্তহত্যার ছুতো ধরে আরেকটি অভিযান তারা পরিচালনা করছে; যারা বিরোধী দল, যারা ভিন্নমত পোষণ করে তাদের ওপর নির্যাতন নেমে আসছে, তাদের দমন করার আরেক প্রক্রিয়া তারা শুরু করেছে।”

অন্যদিকে বিএনপির অভিযোগ নাকচ করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, “বিএনপি যদি তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় না দেয়, তাহলে তাদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। এই অভিযান বিএনপির বিরুদ্ধে নয়। এটা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে।”