কারখানায় আগুন: বয়লার কেনো বিস্ফোরিত হয়

টঙ্গীর বয়লার বিষ্ফোরণ

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান, টঙ্গীর বয়লার বিষ্ফোরণের ঘটনাস্থল থেকে আহত একজনকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশে কারখানাগুলোতে বয়লার বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট দুর্ঘটনার খবর নতুন নয়।

কারখানাগুলোতে অনিরাপদ বয়লার ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন সময়ে।

এরই মধ্যে আজ শনিবার ভোরে ঢাকার কাছে টঙ্গীতে একটি প্যাকেজিং কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের পর অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছে।

এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশংকা করছেন কর্মকর্তারা।

আহত হয়েছে অন্তত ৭০ জন।

বয়লারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যে রয়েছে সরকারের একটি বিভাগ।

তাদের কাজ ঠিকভাবে বয়লার বসানো হয়েছে কীনা এবং এটি কি অবস্থায় আছে তা পরীক্ষা করে দেখা।

এই বিভাগের একজন পরিদর্শক হুমায়ূন কবির বলেছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

তিনি বলেন, বয়লারটি যেভাবে চালানো হয় সেখানে ত্রুটির কারণেই বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।

সাধারণত কি কারণে বয়লার বিস্ফোরিত হতে পারে জানতে চাইলে মি. কবির বলেন, "বয়লারে একটি সেফটি ভালব থাকে যা একটি নির্দিষ্ট চাপে বা প্রেসারে সেট করা থাকে। বয়লারের অবস্থা অনুযায়ী ওই চাপ নির্ধারণ করা হয়। প্রেসার এরচে বেশি হলে সেফটি ভালব আপনা আপনি চালু হওয়ার কথা।"

"প্রেসার বেশি হওয়ার পরেও সেফটি ভালব ওপেন না হলে এধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।"

তিনি বলেন, ময়লা জমে ভালবটি বন্ধ হয়ে গেলেও বয়লার বিস্ফোরিত হতে পারে।

"অনেক সময় দেখা গেছে বয়লারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিছু কিছু জিনিস চালু হওয়ার কথা সেগুলোও ঠিকমতো চালু হয় না," বলেন তিনি।

বয়লার হচ্ছে একটি বদ্ধ পাত্র যার ভেতরে চাপের মাধ্যমে পানিকে বাষ্পে পরিণত করা হয়।

সাধারণত গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি, রঙ করার কারখানা, হাসপাতাল, বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এই বয়লার ব্যবহার করা হয়।

বয়লার বিষ্ফোরণ

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান, বাংলাদেশের কারখানাগুলোতে বয়লার বিষ্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের খবর নতুন নয়। : ফাইল চিত্র

কর্মকর্তারা বলছেন, নিরাপত্তা যাচাই না করে কোথাও কোনো বয়লার বসানো বেআইনি কাজ।

সরকারি হিসেবে বলা হচ্ছে, কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিরাপত্তা যাচাই করে সারা দেশে পাঁচ হাজারের মতো বয়লার বসানো হয়েছে।

কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে, এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি। বেশিরভাগ চালকল বা চাতালে এসব বয়লারে ধান সেদ্ধ করা হয়।

কর্মকর্তাদের ধারণা অবৈধভাবে বসানো এসব বয়লারের সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ হাজার হতে পারে।

তবে কর্মকর্তারা এগুলোকে বয়লার বলতে নারাজ।

তারা বলছেন, এগুলোর মধ্যে বয়লারের অনেক জিনিসই থাকে না। এসব বয়লারের বেশিরভাগই ঝুঁকিপূর্ণ।

মি. কবির বলেন, সংবাদ মাধ্যমে যতো খবর আসে তার সবগুলোই কিন্তু বয়লার বিস্ফোরণ নয়।

গত দু'বছরে নিবন্ধিত মাত্র একটি বয়লারই বিস্ফোরিত হয়েছে।

তিনি জানান, সবশেষ দুর্ঘটনা হয়েছে এবছরের জুলাই মাসে, নওগায়।

বয়লারের নিরাপত্তার বিষয়ে জনগণকে সচেতন করার জন্যে সরকারের এই বিভাগ থেকে নানা ধরনের প্রচারণা চালানো হয়।

মি. কবির বলেন, "আমাদের মূল কথা হচ্ছে মানসম্মত বৈধ বয়লার ব্যবহার করতে হবে।"

তবে তিনি বলছেন, যারা রেজিস্ট্রেশন না করেই বয়লার ব্যবহার করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো এখতিয়ার তাদের নেই।